‘দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনও সংকট নেই। কিন্তু একটি মহল বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচার করছে। সেখানে ব্যাংকের আমানত তুলে নেওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এসব সত্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে।’
সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিকালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ।
এর আগে সোমবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ব্যাংকের আমানত নিয়ে গুজব বন্ধের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যাংকে তারল্যের কোনও সংকট নেই। এরপরও এটা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিষ্কার করে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই নির্দেশনার পর জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমানে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক যেসব খবর প্রচার হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন।’
ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুদৃঢ় আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হচ্ছে ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই বা তারল্য সংকট আছে। এটি সত্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে।’
তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট’ নীতি সর্বদা চালু রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের পরিদর্শন ও সুপারভিশন বিভাগ ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনও ব্যাংক বন্ধ হয়নি। আশা করি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের কোনও ব্যাংক বন্ধ হবে না। ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। আমানত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংক পরিচালকের কাছে বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়েছে। কোনও ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যত্যয় হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরসনের পদক্ষেপ নেবে বলে জানান এই মুখপাত্র।
এলসি ওপেনিং প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, ‘সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি কমার্শিয়াল এলসি ওপেনিং বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি সঠিক নয়। আমাদের তথ্য হলো ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এলসি ওপেন হয়েছে ১ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন ডলার, যা গত মাসের এ সময়ে ছিল ১ হাজার ২৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি বছরের অক্টোবরে এলসি ওপেন হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন ডলার।’
করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে মনে করে তিনি বলেন, ‘যে কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। এরই প্রভাবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সরবরাহ ও চাহিদায় ব্যত্যয় ঘটতে থাকে। কমার্শিয়াল এলসি ওপেন বা খোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। রেমিট্যান্স আয়-ব্যয় সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বিবেচনায় নিজ নিজ ব্যাংক ঋণপত্র খুলছে, খুলে যাবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপূর্ণ গাইডলাইন অনুযায়ী তদারকি করছে।’
‘বিশেষ তদারকিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রার কোনও লোন ডিফল্ট হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা হতেও দেবে না,’ বলেন তিনি।
ডলার সমস্যার বিষয়টি আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ফলে ভারসাম্য ফিরে আসবে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
গণমাধ্যমের তথ্য সত্য নয় উল্লেখ করে এই নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘গণমাধ্যমের কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলসি (ঋণপত্র) বাতিল করা হচ্ছে, যা সত্য নয়। নভেম্বরের প্রথম ১০ দিনে ১ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে, যা গত অক্টোবরে ছিল ৪ হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন।’ নিজ নিজ বৈদেশিক মুদ্রার স্টক অনুসারে ব্যাংকগুলো এলসি খোলার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি।
সোমবার দেওয়া আরেক নোটিশে দেশের আর্থিক খাতের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানায়, বাণিজ্যিক এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সীমা আরোপ করা হয়নি।