X
সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘বাজার স্থিতিশীলতায় বেসরকারি খাত ও সরকারি সংস্থার সমন্বয় জরুরি’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ আগস্ট ২০২৩, ২১:৩৪আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ২১:৩৪

বাজারের অব্যবস্থাপনার কারণে একদিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, অপরদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও মানের হ্রাসের ফলে ভোক্তারা মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বুধবার (২৩ আগস্ট) ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “বেসরকারি খাত এবং সরকারি সংস্থাসমূহের মধ্যকার সমন্বয় সুসংহতকরণ” শীর্ষক স্টেকহোল্ডার আলোচনা সভায় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার এই কথা বলেন।

ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম এই সভায় অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, স্থানীয় উৎপাদন ও বাজার ব্যবস্থাপনার উপর আমাদের অর্থনীতির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভরশীল, কারণ বাজারের অব্যবস্থাপনার কারণে একদিকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, অপরদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও মানের হ্রাসের ফলে ভোক্তারা মানসম্মত পণ্য প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের হয়রানিমুক্ত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা, ভোক্তা অধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করেন। ব্যারিস্টার সাত্তার ভ্যাট রিটার্ন প্রক্রিয়া পুরোপুরি অনলাইন ও অটোমেটেড হওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন এবং ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসে যৌক্তিক হারে ভ্যাট কমানোর আহ্বান জানান। এছাড়াও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রক্রিয়া দ্রুতকরণ, বিএসটিআই’র সক্ষমতা বাড়ানো এবং এনবিআর, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় বৃদ্ধির জন্য তিনি আহ্বান জানান। ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজারে স্থিতিশীলতা আনয়নে বেসরকারি খাত এবং সরকারি সংস্থার মধ্যকার সমন্বয় একান্ত আবশ্যক, বিশেষকরে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর ও শ্রম অধিদফতরের কার্যক্রমের সমন্বয় বিশেষভাবে প্রয়োজন।       

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক খাতের কমপ্লায়েন্স বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে এবং অন্যান্য খাতেও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি মত প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ব্যবসায়িক কাজে প্রয়োজনীয় ‘স্যাম্পল’ ছাড়করণে যদি সময় বেশি লাগে, তাহলে ব্যবসা চলে যাবে ভিয়েতনামসহ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশগুলোতে। তাই এক্ষেত্রে সহজীকরণের কোনও বিকল্প নেই। উত্তর সিটি মেয়র আরও বলেন,  জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসে সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো দ্রুত সংস্কার একান্ত আবশ্যক বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যারা ব্যবসা পরিচালনায় অসাধু পন্থা অবলম্বন করছেন তাদেরকে শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মেয়র আতিক বলেন, সিটি করপোরেশনে সকল সেবা দ্রুতসময়ে ও স্বচ্ছতার সাথে নিশ্চিতের লক্ষ্যে ‘সবার ঢাকা’ অ্যাপস চালু করা হয়েছে এবং নগরবাসীকে তা ব্যবহারের আহ্বান জানান। তিনি জানান, উত্তর সিটি করপোরেশন অঞ্চলে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য ‘পিও’ বক্স প্রবর্তনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাভুক্ত অঞ্চলের জন্য ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি সেবা অনলাইনে আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, যেটি উদ্যোক্তাদের সময় ও ব্যয় হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। তিনি জানান, উত্তর সিটি করপোরেশনের গুলশান ২-এর ট্রাফিক সিগন্যালগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’র মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য জায়গায় তা বাস্তবায়ন করা হবে। মেয়র বলেন, ইলেকট্রনিক বাস সার্ভিস চালুকরণের লক্ষ্যে বাস আমদানি ও রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ হতে সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে। এ ব্যাপারে তিনি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।              

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, তেল-চিনি বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের স্থানীয় চাহিদা আমদানির মাধ্যমে মেটাতে হয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্যের অস্থিতিশীলতার কারণে দেশীয় বাজারে পণ্যের মূল্যে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে স্থানীয় বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণেও আমাদের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে ভোক্তারা মূল্যস্ফীতির শিকার হচ্ছেন। বাণিজ্য সচিব বলেন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় সরকারের কিছু নীতিমালা ও নিয়ম রয়েছে, এগুলোর ব্যবহারে উদ্যোক্তারা আরও বেশি হারে সচেতন হলে হয়রানিসহ অনেক ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। তিনি পাইকারি পর্যায়ে ‘ক্যাশলেস পেমেন্ট সিস্টেম’ প্রবর্তন এবং ‘পাকা রশিদ’ প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হলে দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।

বাণিজ্য সচিব আরও জানান, দেশীয় শিল্পের বিকাশ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে সরকার দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে গিয়ে আমদানি পর্যায়ে শুল্কারোপ করছে, যা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশের অবকাঠামোসহ উন্নয়ন খাতে ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের শুধু মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির উপর জোর দিলে হবে না, ব্যবসায়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে।      

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে গ্যাপ রয়েছে, যেটি নিরসন করা দরকার। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতের অবদান প্রায় ৮২% এবং বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সহায়ক নীতি সহায়তা প্রদানে সরকার বদ্ধ পরিকর।   

এফবিসিসিআই’র সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রশাসনিক জটিলতা, অর্থায়নের সীমাবদ্ধতা, কর হার সমস্যা, দক্ষ মানবসম্পদের অভাব এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশের অনুপস্থিতির কারণে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এছাড়াও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশের মূল্য বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটের কারণে আমাদের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন, তবে দেশের ব্যবসায়ীরা সৎভাবে ও সম্মানের সাথে ব্যবসা ও বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় এবং এ জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের মানসিকতার পরিবর্তন। তিনি জানান, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাসে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনও বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং আগামীতে বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকার-বেসরকারি খাতের সমন্বয় অতিজরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। কৃত্রিমভাবে পণ্যের প্রাপ্তির সংকট ও মূল্য বৃদ্ধিকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।    

/জিএম/এমএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
কেরানীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে এইচপি ক্যাম্প
তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে এইচপি ক্যাম্প
‘আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, বাকি দায়িত্ব আমাদের’
‘আপনারা ভোটকেন্দ্রে আসবেন, বাকি দায়িত্ব আমাদের’
মোনালিসার স্মৃতিতে রঙিন প্রেমপত্রের গল্প
মোনালিসার স্মৃতিতে রঙিন প্রেমপত্রের গল্প
সর্বাধিক পঠিত
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
শনিবার ক্লাস চলবে ডাবল শিফটের স্কুলে
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
রাইসির হেলিকপ্টারের অবস্থান ‘শনাক্ত’, সুসংবাদের প্রত্যাশা
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
নতুন বাণিজ্য সচিবের দায়িত্ব গ্রহণ
ঋণ খেলাপের দায়ে স্ত্রী-ছেলেসহ স্টিল মিল মালিকের কারাদণ্ড
ঋণ খেলাপের দায়ে স্ত্রী-ছেলেসহ স্টিল মিল মালিকের কারাদণ্ড
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু
হামজার পর দিয়াবাতেকে বাংলাদেশ দলে খেলানোর প্রক্রিয়া শুরু