X
শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫
২৬ বৈশাখ ১৪৩২
ভোক্তা অধিদফতরের সভা

আলুর দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:২৭আপডেট : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২০:০৫

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, আলু আমাদের দেশে মূলত প্রধান খাদ্য। আলু উৎপাদনে বর্তমানে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কয়েক বছর ধরে আলুর মূল্য স্থিতিশীল ছিল। সম্প্রতি দেশের বাজারে হঠাৎ আলুর দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়। আলুর দাম বাড়ার বিষয়টি আমরা লক্ষ করছিলাম। অন্যান্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ডলার সংকট বা বৈশ্বিক প্রভাব থাকলেও আলুর মূল্য বৃদ্ধির কোনও যৌক্তিকতা নেই।

মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে আলুর মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  

সভায় অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল জানান, আলু দেশে উৎপাদিত পণ্য। এটি আমদানি করা পণ্য নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি বা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সঙ্গে এই পণ্যের দাম বাড়ার সম্পর্ক নেই। তারপরও আগস্ট মাসে ২০-২৫ টাকার আলু বর্তমানে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলোচনায় কৃষি বিপণন অধিদফতরের সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘যে উৎপাদনের কথা আমরা শুনি তাতে আলুর মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ নেই। কেন মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘উৎপাদন হিসেবে আলু রফতানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উৎপাদন আর চাহিদা অনুযায়ী আলুর সংকট হওয়ার কথা নয়। এটা নৈতিকতার অবক্ষয়। কোথাও গ্যাপ হচ্ছে, যার জন্য দাম বাড়ছে।’

শ্যামবাজারের আলু ব্যবসায়ীরা বলেন, এ বছর দুই মাস আগেই কোল্ড স্টোরেজ থেকে আলু বের হয়েছে। মোবাইল ফোনে ব্যাপারীরা দাম ঠিক করে দেয়। আমরা আলু বিক্রি করে শুধু কমিশন পাই।

সভায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আলুগুলো কোল্ড স্টোরেজ থেকে কিছু দিন আগে বের হয়েছে। আমাদের কোল্ড স্টোরেজে এখনও প্রায় ৬০ শতাংশ আলু আছে। তার মধ্যে বীজ আলু আছে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ। যারা বেশি পরিমাণে আলু মজুত করে রেখেছে তারাই মূলত বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে। যারা কোল্ড স্টোরেজে আলু মজুত করে রেখেছে তাদের ইতোমধ্যে তিনটি নোটিশ করেছি, যেন বিক্রির পদক্ষেপ নেওয়া হয়। যদি বিক্রির ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা অক্টোবর মাস থেকে নিজেরাই আলু বিক্রির ব্যবস্থা করবো। অসাধু ব্যবসায়ীরা আলু মজুত করে, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এ অবস্থায় তাদের পাকা রসিদের মাধ্যমে আলু ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্য করতে হবে।’

আলোচনায় ক্যাবের মহাসচিব অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করি। ভোক্তা যেন সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য পায় এটাই আমাদের দাবি। এফবিসিসিআই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে জেনে আমরা খুশি হয়েছি। ভোক্তা অধিদফতর এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিতে সব সংস্থার সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।’

সভায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি বলেন, ‘আলু আমদানি করা পণ্য নয়। তাই ডলার সংকট বা শুল্ক আরোপের বিষয়টি আলুর মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এছাড়াও চাহিদা অনুযায়ী আলুর পর্যাপ্ত উৎপাদন হয়েছে বিধায় আলুর মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনও কারণ নেই। কোল্ড স্টোরেজে আলু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পাকা রসিদ নিশ্চিতের বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করা হলে আলুর মূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় আসবে।’

সভায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর আলুর মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রতিকেজি ৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ১৭ মার্চের পর আমরা লক্ষ করেছি, কোল্ড স্টোরেজে আলু আসা কমতে শুরু করেছে। এ বছর আলুর উৎপাদন কম হলেও চাহিদা অনুযায়ী তা পর্যাপ্ত রয়েছে এবং আলুর কোনও সংকট নেই। আমরা মনে করি, ভোক্তা বা খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম ৩৬ টাকার ওপর হওয়া উচিত নয়।’

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আলোচনায় উঠে এসেছে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আলুর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আলু যে পরিমাণে উৎপাদন হয়েছে এবং চাহিদা যে পরিমাণে রয়েছে তা পর্যাপ্ত বিধায় মূল্য বৃদ্ধির কোনও যৌক্তিকতা নেই। আলুর কোনও ঘাটতি নেই। কোল্ড স্টোরেজে যে পরিমাণ মজুত আছে, তা আগামী ডিসেম্বরে নতুন আলু আসার আগ পর্যন্ত যথেষ্ট।’

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা ক্রয়-বিক্রয়ে বাধ্যতামূলক পাকা রসিদ রাখবেন এবং ন্যায্য দামে সঠিকভাবে সঠিক পণ্য বিক্রয় করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আলু সংরক্ষণে জন্য ব্যবহৃত কোল্ড স্টোরেজগুলোর মধ্যে যেগুলো তালিকাভুক্ত নয় সেগুলো তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আগামীকাল থেকে অধিদফতর সারা দেশে, বিশেষ করে শ্যামবাজার ও খাতুনগঞ্জে আলুর ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা ভাউচার নিশ্চিতে বাজার মনিটরিং জোরদার করবে। মনিটরিংয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে পাকা ভাউচার না পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মহাপরিচালক বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সমন্বিত মনিটরিং টিম গঠন করে যেন কোল্ড স্টোরেজগুলো মনিটরিং করা হয় তার সুপারিশ করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে হলে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে ব্যবসা করতে হবে। এই সেক্টরে স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

/এসও/আরকে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভুয়া ফেসবুক আইডি, ভোক্তা কর্মকর্তার জিডি
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি, চার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করায় ৬০ হাজার টাকা জরিমানা
সর্বশেষ খবর
যেসব পুষ্টি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে
যেসব পুষ্টি উপাদানের অভাবে চুল পড়ে
এনসিপির অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা জামায়াতের প্রতিনিধি দলের
এনসিপির অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা জামায়াতের প্রতিনিধি দলের
বাজেটে ভর্তুকি দিলেও এলএনজি আমদানিতে ঘাটতি ১১ হাজার কোটি টাকা
বাজেটে ভর্তুকি দিলেও এলএনজি আমদানিতে ঘাটতি ১১ হাজার কোটি টাকা
হজ কার ওপর ফরজ এবং এর কী ফজিলত
হজ কার ওপর ফরজ এবং এর কী ফজিলত
সর্বাধিক পঠিত
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
‘সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে জড়িতদের শাস্তি দিতে না পারলে আমি চলে যাবো’
দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
দেশ ছেড়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
জার্সি পরেই যমুনার সামনে দায়িত্বে রমনার ডিসি মাসুদ আলম
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
নৌ পুলিশের অভিযানে ২৭৬ জন গ্রেফতার, ১০ মরদেহ উদ্ধার
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করলেন স্নিগ্ধ