X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ‘শর্ত’ নিয়ে যা বলছে বিজিএমইএ

গোলাম মওলা
০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০০আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩০

শ্রম অধিকার সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র নতুন শ্রমনীতি ঘোষণার পর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা। এই দুশ্চিন্তা আরও কিছুটা বেড়েছে একটি আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের শর্ত জুড়ে দেওয়ায়। এই প্রতিষ্ঠানটি নতুন শর্ত আরোপ করে বলেছে, বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে, তাহলে কোনও ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধ করা হবে না।

ঋণপত্রের সাধারণ শর্তের মধ্যে বলেছে, বাংলাদেশ কোনও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়লে তারা পণ্য নেবে না। যদি পণ্য জাহাজীকরণের পর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনও ঘটনা ঘটে, তাহলে অর্থ ফেরতও দেবে না প্রতিষ্ঠানটি।

তবে কোন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এমন শর্ত দিয়েছে কিংবা কোন পোশাক কারখানাকে এমন শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা জানাননি বিজিএমইএ সভাপতি।

এ নিয়ে ব্যবসায়ী মহলে তোলপাড় চলছে। এ প্রসঙ্গে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বিজিএমইএর সদস্য এক ব্যবসায়ীকে নতুন করে শর্ত আরোপ করেছে ওই ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের বিক্রেতা। অতীতে তারা এ ধরনের কোনও শর্ত দেয়নি।’

তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের খোলা ঋণপত্রে সাধারণত এ ধরনের শর্ত উল্লেখ থাকে। তবে এবারই প্রথম ঋণপত্রে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের শর্ত দিয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিজিএমইএ সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ফারুক হাসান বলেন, ‘বর্তমানে পোশাক শিল্প এক চ্যালেঞ্জিং সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ভূত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এই শিল্প।’

পরে বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে একটি বিবৃতি দিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাণিজ্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল, এ কারণে বাণিজ্যনীতি সংক্রান্ত যে কোনও নতুন বিষয় আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়।’

ফারুক হাসান বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, ‘সম্প্রতি বিজিএমইএ-এর এক সদস্যকে বিদেশি ক্রেতার পাঠানো একটি লেটার অব ক্রেডিটের (এলসি) অনুলিপি আমাদের নজরে এসেছে। এলসিতে নিম্নলিখিত বিষয়টি রয়েছে— আমরা জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত কোনও দেশ, অঞ্চল বা দলের সাথে লেনদেন প্রক্রিয়া করবো না। নিষেধাজ্ঞার কারণগুলোর জন্য আমরা কোনও বিলম্ব, নন-পারফরমেন্স বা তথ্য প্রকাশের জন্য দায়ী নই।’

এই ধারাটির ব্যাখ্যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে বলে উদ্বেগ ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা সঠিক নয় জানিয়ে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘এলসি-টি একটি নির্দিষ্ট ক্রেতার কাছ থেকে এসেছে এবং এটি কোনও দেশের দ্বারা সংবিধিবদ্ধ আদেশ বা বিজ্ঞপ্তি নয়। সুতরাং এটিকে বাংলাদেশের উপর বাণিজ্য ব্যবস্থা প্রয়োগ বা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের বার্তা হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা উচিত হবে না।’

ফারুক হাসান বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আরও স্পষ্ট করে বলছি যে— স্বতন্ত্র ক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ নীতি এবং প্রোটোকল থাকতে পারে, তবে একটি এলসি কপি বা একটি ব্যক্তিগত বাণিজ্যিক ইনস্ট্রুমেন্ট কোনও অফিসিয়াল ঘোষণা নয়। তাছাড়া, বিজিএমইএ আমাদের কূটনৈতিক মিশন থেকে বা কোনও অফিসিয়াল সোর্স থেকে বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা বা বাণিজ্য ব্যবস্থা আরোপের কোনও তথ্য পায়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের অধিকার এবং কল্যাণকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে একটি শ্রম রোডম্যাপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে শ্রম আইনের সংশোধনসহ এটি বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’

এদিকে বুধবার রংপুরে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কথা বলেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাংলাদেশ কোনও নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, ‘পণ্য না নেওয়া কিংবা অর্থ পরিশোধ না করার শর্ত যুক্ত করে কোনও তৈরি পোশাক মালিক বাধার মুখে পড়েননি এখনও। এ নিয়ে উদ্যোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

এর আগে ৪ ডিসেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ সচিবালয়ে নিজ দফতরে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসার মতো কোনও পরিস্থিতি নেই।

যদিও তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের অনেকেই বলছেন নিষেধাজ্ঞা আসার আগেই এই ধরনের শর্ত পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, অথচ তার আগেই এই ধরনের শর্ত কেন দেবে?’ আতংক সৃষ্টির জন্যই এই ধরনের শর্ত দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ বলছেন, ‘একটি ক্রেতার দেওয়া শর্ত অন্যান্য ক্রেতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। শুধু তাই নয়,এতে করে অনেক ব্যাংক মূল ঋণপত্রের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে না–ও পারে। তার কারণ হচ্ছে, নতুন এই শর্তের জন্য তৈরি পোশাক রফতানির পর অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টিতে কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। আবার ক্রেতা পণ্য না নিলে স্টক হয়ে যেতে পারে।’

ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য সরকারের ওপর মহলে কথা বলবেন বলেও জানান বিজিএমইএর সভাপতি।

এ ঘটনার পর উদ্যোক্তারা দুশ্চিন্তায় পড়বেন কি না, জানতে চাইলে ফারুক হাসান বলেন, ‘অবশ্যই উদ্যোক্তারা টেনশনে পড়বেন। যদিও আমরা মনে করি না, ব্যবসায় কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমনীতি বিশ্বের সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য, সেহেতু অন্য দেশে ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই ধরনের শর্ত হয়তো দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।’

ফারুক হাসান বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘১৬ নভেম্বর ইউএস প্রেসিডেন্সিয়াল মেমোরান্ডাম কর্মীর ক্ষমতায়ন, অধিকার এবং বিশ্বব্যাপী চলমান লেবার ক্যাম্পেইনের সঙ্গে উচ্চ শ্রমমান জুড়ে দিয়ে স্বাক্ষর করেছে, যা এনগেজমেন্ট এবং প্রয়োগের দিক থেকে বেশ স্বতন্ত্র বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। আমরা এর তাৎপর্যকে সম্মান করি এবং এর মূল নীতিগুলোর সাথে একাত্মতা খুঁজে পাই। যদিও স্মারকলিপিতে ‘কূটনৈতিক ও সহায়তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা এবং যথাযথ আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা, ভিসা নিষেধাজ্ঞা এবং অন্যান্য পদক্ষেপ’সহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে, তবে এটি বাংলাদেশের জন্য গৃহীত নয়, বরং এটি শ্রমিক অধিকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা অবস্থান।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা অতীতেও একই ধরনের উদাহরণ দেখেছি; এক ক্রেতার কাছ থেকে আসা একটি এলসি ক্লজ উদ্ধৃত করে এটিকে বাংলাদেশের উপর নিষেধাজ্ঞা হিসাবে সাধারণীকরণ করা হয়েছে এবং আমরা এ ধরনের ভুল তথ্য উপস্থাপনের বিরুদ্ধে সব সময়ই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। তবে আমরা বাণিজ্যিক কাগজপত্র ও উপকরণে এই ধরনের ধারা অন্তর্ভুক্ত করাকে সমর্থন করি না, যদি এটি শুধু বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনুশীলন করা হয়। বিজিএমইএ তার সদস্যদের, যারা উপরে উল্লিখিত এই জাতীয় ধারাসহ এলসি গ্রহণ করে, তাদের সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড(গুলো) এর সঙ্গে যোগাযোগ করে এর একটি স্পষ্টীকরণ চাওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। যদি ধারাটি কেবলমাত্র বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের অনুকূলে জারি করা এলসিগুলোতে থাকে, তবে এটি নৈতিকতা লঙ্ঘন করে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, আমরা আমাদের সদস্য কারখানাগুলোকে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনে এই ধরনের ক্রেতাদের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পর্যালোচনা বা পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করবো।’’

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র গত ১৬ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় নতুন নীতি ঘোষণা করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এ নীতি প্রকাশকালে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে, শ্রমিকদের হুমকি দেবে, ভয় দেখাবে, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতির বিষয়ে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে ‘শঙ্কা’ প্রকাশ করে বাণিজ্যসচিবকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকারবিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ। কারণ শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে এই নীতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা রাষ্ট্রের ওপর আরোপের সুযোগ রয়েছে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যাঞ্চলে টর্নেডোর আঘাতে নিহত ৫
এপি'র সাংবাদিককে গ্রেফতার করলো রাশিয়া
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
মহসিনকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত সাব্বির-কায়সার-বিপ্লবরা
মহসিনকে পেয়ে আবেগে আপ্লুত সাব্বির-কায়সার-বিপ্লবরা
দুবাইয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
দুবাইয়ে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
ওষুধের দাম নিয়ে যে নির্দেশ দিলেন হাইকোর্ট
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড