বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ আহ্বান জানান। মঙ্গলবার (১৩ মে) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিডার প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিডা ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বিন হারুন।
তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান দেশের জাতীয় স্বার্থ, এটি কোনও দলের স্বার্থের বিষয় নয়। টেকসই বিনিয়োগের জন্য নীতির ধারাবাহিকতা ও চলমান সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।’
সভায় ১৭টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাসদ, এনসিপি, এনডিএমসহ আরও কয়েকটি দল।
বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি এক প্রেজেন্টেশনে বলেন, দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের বিনিয়োগকারীদের মতামতের ভিত্তিতে বিডা পাঁচটি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেছে— সরকারি সেবার মান, নীতির ধারাবাহিকতা, শিল্পখাতভিত্তিক পরামর্শ, দুর্নীতি এবং সম্পদের কার্যকর ব্যবহার।
তিনি জানান, এসব সমস্যা দূর করতে বিডা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সভায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো এসব উদ্যোগের প্রশংসা করে বিডাকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, আইনি জটিলতা নিরসন, শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি একটি দীর্ঘমেয়াদি কাজ। এটি শুধু এক বছরের সংস্কারে সম্ভব নয়। রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও বৈশ্বিক বাস্তবতার ওপর এটি নির্ভর করে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি ফাইন্যান্সিয়াল সনদের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এতে সরকার পরিবর্তন হলেও বিনিয়োগ নীতির স্থায়িত্ব থাকবে।
সভা শেষে সমাপনী বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, জাতীয় স্বার্থের বাইরে কোনও সিদ্ধান্ত বিডা নেবে না। চট্টগ্রাম বন্দরসহ সব অবকাঠামো উন্নয়নে আমরা বিশ্বমান নিশ্চিত করতে চাই, তবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনও আপস করা হবে না।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই ধরনের গঠনমূলক সংলাপ ভবিষ্যতেও নিয়মিত অব্যাহত থাকবে।