বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ছয়টি ব্যাংকের সম্পদের মান পর্যালোচনার পর পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে কোনও ব্যাংক যদি একীভূত না হওয়ার জন্য যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে, তবে তা পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। যদিও গভর্নরের মতে, এসব ব্যাংক যৌক্তিকতা দেখাতে সক্ষম হবে না।
সোমবার (৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর এসব কথা বলেন। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কাঠামোর সংস্কার বিষয়ে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এবং পরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে পৃথক দুটি বৈঠক করেন।
গভর্নর জানান, আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে দেশে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি ব্যবস্থা চালু করা হবে। নতুন ব্যবস্থায় পুরনো তদারকি কাঠামো ভেঙে ১২টি বিভাগে ভাগ করে সার্বক্ষণিক নজরদারির আওতায় আনা হবে ব্যাংকগুলোকে। এতে আর্থিক খাতের কার্যক্রম আরও সুশৃঙ্খল ও স্বচ্ছ হবে বলে মনে করেন তিনি।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে নতুন তদারকি কাঠামো কতটা কার্যকর হবে— এমন প্রশ্নে গভর্নর বলেন, “এই ব্যবস্থার মাধ্যমে রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করা যাবে না। তার জন্য রাজনীতিকে শুদ্ধ হতে হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব দেবো।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ছাড়া ব্যাংক খাতের ঝুঁকি কমানো সম্ভব নয়। যে রাজনৈতিক দল ব্যাংক খাতকে দুর্বল করে গেছে, তাদের পরিণতি জনগণ দেখেছে। সাময়িক লাভ হলেও রাজনৈতিকভাবে তা ক্ষতির কারণ হয়।”
ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ সংস্কার প্রসঙ্গে গভর্নর জানান, প্রতিটি ব্যাংকের পর্ষদে ৫০ শতাংশ পরিচালক স্বতন্ত্র হবেন। এসব স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত একটি তালিকা থেকে। সেই সঙ্গে শেয়ারধারী ও স্বতন্ত্র— উভয় পরিচালককেই হতে হবে যোগ্যতাসম্পন্ন।
যেসব ব্যাংকে পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাদের কার্যক্রম নজরদারির আওতায় রয়েছে বলেও জানান গভর্নর। প্রয়োজনে আরও পরিবর্তন আনা হবে।
অমানতকারীদের উদ্দেশে গভর্নর আহ্বান জানান, “সব আমানতকারীর অর্থ সুরক্ষিত রয়েছে। বিশেষ করে ছোট আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।” যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কেন বন্ধ করা হবে না— এমন প্রশ্ন তুলে নোটিশও পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গভর্নরের মন্তব্য অনুযায়ী, সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান টিকতে পারবে না। তবে ব্যাংক খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাবে।