X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কোথাও নির্ধারিত দামে বিক্রি হয় না এলপিজি, ভোগান্তিতে গ্রাহক

সঞ্চিতা সীতু ও রিয়াদ তালুকদার
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৫আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২:১৮

চড়া এলপিজির বাজারে ভোক্তা কষ্টে আছে। সরকারিভাবে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না বাজারে। গ্রাহকরা প্রতি ১২ কেজির এলপিজির জন্য গুনছেন ১৭৫০ টাকা। সরকারিভাবে ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে ১৪৯৮ টাকা।

অন্যদিকে বিইআরসি জানুয়ারি মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজি এলপিজির দাম ১ হাজার ২৩২ নির্ধারণ করে দেয়। তখনও ১ হাজার ৫৫০ টাকার নিচে ১২ কেজির প্রতি বোতল এলপিজি বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে দাম নির্ধারণ করার পর এখন বাজারে তা ১৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা রুশিয়া মিলি জানান, তিনি গত মাসের শুরুতে এক হাজার ৪০০ টাকায় ১২ কেজির এক বোতল এলপিজি কিনেছেন। মাসের শেষে এসে সেই দাম বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৭৫০। সরকারিভাবে যে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় কোনও দিনই তা মানা হয় না। তাহলে কেন লোক দেখানোর জন্য এই দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় তা জানতে চান তিনি।

রাজধানীর হাতিরপুলের এক খুচরা এলপিজি ব্যবসায়ী জানান, তারাই ডিলারদের কাছ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকার বেশি দামে এলপিজি কিনছেন। এর সঙ্গে প্রত্যেক বোতলের পরিবহন খরচ রয়েছে। সেটি যোগ করলে এলপিজির ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১ হাজার ৪৮০ টাকা। এরপর তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, দোকান ভাড়া, কর্মচারী, আমার নিজের সংসার, আমার তাহলে কত বিক্রি করা উচিত?

প্রতিমাসে সরকারিভাবে বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে দেয়। আগে সেই দাম যথেষ্ট হচ্ছে না বলে এলপিজি অপারেটররা বিরোধিতা করে। পরে বিইআরসি আরও এক দফা শুনানি করে অপারেটরদের মন রাখে। তখন অপারেটররা দাম ঠিক করে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়। তবে সেই দামে গ্রাহক এলপিজি পায় না।

বিইআরসি জানায়, ডিসেম্বর মাসের জন্য সৌদি আরামকোর প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) যথাক্রমে প্রতি মেট্রিক টন ৬৫০ মার্কিন ডলার এবং ৬৫০ মার্কিন ডলার ছিল। এটি জানুয়ারি মাসে কমে যথাক্রমে ৫৯০ এবং ৬০৯ ডলার হয়েছিল। এবার তা আবার বেড়ে প্রোপেন ও বিউটেনের ঘোষিত সৌদি সিপি (কন্ট্রাক্ট প্রাইস) ৭৯০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। দেশের এলপিজির কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের সংমিশ্রণের অনুপাত ৩৫:৬৫।

রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা হেনা মমতাজ জানান, প্রতিমাসেই এলপিজির জন্য বাড়তি দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। এক মাসের চেয়ে আরেক মাসে এসে দাম বাড়ছে। আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের এই চাপ নেওয়া কঠিন।

প্রসঙ্গত, প্রতি মাসে এখন এলপিজির চাহিদা রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টন। সেই হিসেবে বার্ষিক এলপিজির চাহিদা ২ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।

১৪৯৮ টাকার ১২ কেজি এলপিজির দাম ১৮০০ টাকা পর্যন্ত রাখার কারণ জানতে চাইলে ডিলাররা বলছেন, দায় কোম্পানির। কোম্পানি বলছে ডিলারে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ১৮টি কোম্পানি এলপিজি গ্যাস বিক্রি করছে।

সরকারি দামে এলপিজি সিলিন্ডার কখনও বিক্রি হয়নি বলে বরাবরই অভিযোগ ছিল। সবসময় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামেই কিনতে হয়েছে গ্রাহকদের, কিন্তু এবার সেটা ‘অতিরিক্ত বেশি’ দামে বিক্রি হচ্ছে। গ্রাহকের কোনও উপায় নেই, বাধ্য হয়েই কিনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের হেড অব সেলস প্রকৌশলী জাকারিয়া জালাল বলেন, ‘এলপিজি সিলিন্ডারের মূল্য বেশি রাখাটা যে শুধু কোম্পানির দোষ, ব্যাপারটা তা নয়। আমাদের এই গ্যাস বিক্রির সিস্টেমে কিছু ত্রুটি আছে। সেটা নিরসনে অনেক দিন ধরেই বিইআরসিকে আমরা বলে আসছি। ত্রুটি ঠিক করা হলে নির্ধারিত মূল্যেই সিলিন্ডার বিক্রি করা সম্ভব হবে।’

‘এলসি খোলায় সমস্যা’ আরেকটি কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসে এলসি খুলে এলপিজি আমদানি করি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধারাবাহিকভাবে এলসি খোলা যাচ্ছে না। যদি মাসে দুটি এলসি খোলা হয়ে থাকে, তাহলে একটার সঙ্গে আরেকটা এলসি খোলার যে ধারাবাহিকতা সেখানে গ্যাপ তৈরি হচ্ছে। সে গ্যাপের সুযোগ নিচ্ছে ডিলার ও দোকানিরা। যখন ডিলাররা দেখে যে এ মাসে প্রোডাক্ট কম আসছে কোম্পানি থেকে, তখন তারা টার্গেট পূরণের জন্য বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করে। আপনি তাদের কাছে সঠিক মূল্যের হিসাব পাবেন না। আবার দোকানি যখন দেখছে সাপ্লাই কম, তারাও তখন মজুত করে দাম বাড়িয়ে ফেলে। সুতরাং সমস্যাটা সামগ্রিকভাবে তৈরি হয়। কোম্পানি যে দামে সেল করতে চায়, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে গিয়ে তার দাম বেড়ে যায়। আমরা সবসময় চেষ্টা করি নির্ধারিত মূল্যেই গ্যাস বিক্রি করতে।’

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এক সদস্য বলেন, ‘এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেশি রাখা হলে গ্রাহকরা অভিযোগ দিতে পারবেন। তবে আমরা এখনও এ বিষয়ে কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকরা সচেতন হলে মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা কমে যাবে। ভোক্তা অধিকারও এ বিষয়ে কাজ করছে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার পরিদফতরের অভিযোগ বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর মাসুম আরেফিন বলেন, ‘আমরা মৌখিক বেশ কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে নিজেদের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছি এবং অভিযুক্তদের জরিমানা করছি। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে যদি কোথাও অতিরিক্ত মূল্য রাখা হয়, গ্রাহকরা যদি অভিযোগ করেন, আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

/আরআইজে/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে প্রাণ গেলো বাবার
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
নুসিরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা, শিশুসহ নিহত ৮
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
লাল কৃষ্ণচূড়া, বেগুনি জারুলে ছুঁয়ে যায় তপ্ত হৃদয়
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!