অবৈধ গ্যাস ব্যবহার করায় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি ৫ লাখ ২১ হাজার ৪৬টি লাইন কেটেছে। ২০২১ সালের অক্টোবরে থেকে গত জুন পর্যন্ত এসব লাইন কাটা হয়েছে। তিতাস গ্যাসে এখন আর চিহ্নিত কোনও অবৈধ সংযোগ নেই। একটি অবৈধ সংযোগ থাকা পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। আজ সোমবার (১০ জুলাই) তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানায়।
তিতাস বলছে, ২০২১ সালের অক্টোবরে থেকে গত জুন পর্যন্ত ২২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্নভাবে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। একই সঙ্গে ৫৫ থেকে ৬০ জন ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অবৈধ সংযোগ ছাড়াও বকেয়ার কারণে আবাসিকে ৮২ হাজার ৪৮২টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এছাড়া শিল্প, বাণিজ্য, ক্যাপটিভ এবং সিএনজির আরও ৪৪৭টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লাহ জানান, তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জে ৩ লাখ ৮ হাজার ৪৯৮টি, গাজীপুরে ১ লাখ ৪৯৪টি, ময়মনসিংহে ৩৭২টি, ঢাকা দক্ষিণে ১২ হাজার ৭৭৪টি, ঢাকা উত্তরে ৯৭ হাজার ৯৯টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। এছাড়া বকেয়ার কারণে ৮২ হাজার ৪৮২টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে।
এর বাইরে অবৈধ ব্যবহারের কারণে ৬৪৪টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস। এরমধ্যে শিল্পে ২৫০টি, বাণিজ্যে ৩২৯টি, ক্যাপটিভে ৫৫টি, সিএনজিতে ১০টি।
হারুনুর রশীদ মোল্লাহ জানান, আগে যেমন মাটি খুঁড়লেই অবৈধ ব্যবহারকারী পাওয়া যেত এখন আর তেমনটি পাওয়া যায় না। আমরা অনেকটা ক্লিন করে ফেলেছি। তিনি বলেন, লাইন অপসারণ করতে গেলে আমরা সাধারণ জনগণের বাধার মুখে পড়লেও জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা পেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা তিতাসের ২২৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নানা ধরনের শাস্তির আওতায় এনেছি। এরমধ্যে ৮ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিতাসকে জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সব প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতকালও আমি ৯১ জনকে বদলি করেছি।
হারুনুর রশীদ বলেন, অবৈধ সংযোগের বিষয়ে আমরা অনেক অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা জনসংযোগ করেছি। বলেছি চুরি ঠেকাতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাদের বলেছি লাইন কেটে দেওয়ার পর আবার লাইন বসলে সেই অঞ্চলের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে আমরা অনেক ভালো ফল পেয়েছি।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত জুন পর্যন্ত ৩৩০টি মোবাইল কোর্টসহ ২৮ হাজার ৩৯৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ৬৬৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন, অবৈধ সংযোগ ও বকেয়ার কারণে ৬ লাখ ২ হাজার ৮৮৪টি চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। মোট ৬ লাখ ৩ হাজার ৯৭৫টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অবৈধ ব্যবহারের কারণে ২৫০টি শিল্প, ৩২৯টি বাণিজ্যিক, ৫৫ ক্যাপটিভ, ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে ৩২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল এবং ৯১ কোটি ২৫ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। এরমধ্যে অতিরিক্ত বিল বাবদ ১৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা টাকা আদায় হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৩৮৬ কোটি ১৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। এরমধ্যে ১৫২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এখন বকেয়ার পরিমাণ কমে ১৬৫৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় নেমে এসেছে। বেসরকারি খাতে ৩১ হাজার ১৫৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল, এখন ৫ হাজার ৪৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা রয়েছে।
তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা জোনগুলোতে মিটার বসিয়েছি। এখনও আলাদা করতে পারিনি। পরবর্তী আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে জানানো হবে।