X
বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

এবার ঢাকায় যুক্ত হচ্ছে আদানির বিদ্যুৎ

শফিকুল ইসলাম
২৯ জুলাই ২০২৩, ২৩:৫৯আপডেট : ২৯ জুলাই ২০২৩, ২৩:৫৯

আদানি (ঝাড়খন্ড, ভারত) বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকার সঞ্চালন লাইনে যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ এর পাশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও স্বাভাবিক হবে। এ জন্য নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে ৪০০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন ২৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং বসানো হবে চারটি এআইএস বে (বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন)। তার মধ্যে দুটি ৪০০ কেভি ও বাকি দুটি ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন।

দেশের ছয়টি জেলার ২৩টি উপজেলার ওপর দিয়ে ঢাকায় আসবে এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন। এ জন্য ৯ হাজার ৮০৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড।

সম্প্রতি (১৮ জুলাই) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রকল্পটির অনুমোদন করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ভারতের ঝাড়খন্ডের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিজিসিবির অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগে পৌঁছানো সম্ভব হলেও, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় তা লোড সেন্টার ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। এ জন্য সরকার আদানির বিদ্যুৎ ঢাকায় আনতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে ৯ হাজার ৮০৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে নেওয়া ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভারতের আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ লোড সেন্টার ঢাকাসহ এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ নির্ভরযোগ্যভাবে সঞ্চালনের জন্য কনটেনজেনসি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন নেটওয়ার্ক নির্মিত হবে, যার ফলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, ৩ হাজার ৩২২ কোটি ৩৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৯ সালে নেওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তন, প্রকল্পে বিভিন্ন প্যাকেজের ব্যয় বৃদ্ধি, প্যাকেজ ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রকল্প ঋণ খাতে অতিরিক্ত অর্থের সংস্থান ও প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোসহ প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় বাড়া-কমার কারণে সংশোধনী আনতে হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫২ কোটি টাকা করে ২০২৪ সালের জুনে শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ধরা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এরপর দ্বিতীয় দফা সংশোধনী এনে প্রকল্পের ব্যয় ৯ হাজার ৮০৫ কোটি ৮৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাস্তবায়নের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প ব্যয়ের মোট অর্থের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে (জিওবি) জোগান দেওয়া হবে ২ হাজার ৮৪০ কোটি ৮৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এলওসি-২) থেকে প্রকল্প ঋণ পাওয়া যাবে ৬ হাজার ২০৮ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ৭৫৬ কোটি ৪৬ লাখ ১২ হাজার টাকা।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ নির্ভরযোগ্যভাবে সঞ্চালনের জন্য ঘ-২ কনটিনজেনসি নিশ্চিতকরণ, দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন নেটওয়ার্ক নির্মাণ এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং লো ভোল্টেজ সমস্যার সমাধান করার উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলের পাঁচটি, গাজীপুরের একটি, জয়পুরহাটের চারটি, বগুড়ার সাতটি, সিরাজগঞ্জের দুটি এবং দিনাজপুরের চারটি উপজেলার ওপর দিয়ে বসানো হবে ২৬০ কিলোমিটারের কমবেশি নতুন সঞ্চালন লাইন।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে প্রকল্পটির অনুকূলে মোট ১ হাজার ৫৭০ কোটি ১০ লাখ (জিওবি ৪০০ কোটি টাকা, প্রকল্প ঋণ খাতে ১ হাজার ১৪২ কোটি ৬ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব ২৮ কোটি ৪ লাখ) টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

আরও জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন, বগুড়া থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত ১৩১ দশমিক ৪০ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। বগুড়া থেকে কালিয়াকৈর ৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি লাইনের যমুনা নদী পারাপার অংশ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া কালিয়াকৈর ৪০০/২৩০ কেভি উপকেন্দ্রে ৪০০ কেভি দুটি এআইএস বে সম্প্রসারণ এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুর ২৩০ কেভি সুইচিং স্টেশনে ২৩০ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন আরও দুটি এআইএস বে সম্প্রসারণ করা হবে।

কমিশন আরও জানিয়েছে, সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মোট ৩ হাজার ৩৫৮ সার্কিট কিলোমিটার বিদ্যমান বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতাবর্ধন এবং উচ্চ বিভবসম্পন্ন (হাই ভোল্টেজ) নতুন বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে সঞ্চালনব্যবস্থায় বিদ্যমান উপকেন্দ্রগুলোর প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন অপরিহার্য। তাই ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ২৬০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ এবং চারটি বে-সম্প্রসারণের সংস্থান আছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকল্পটি শতভাগ সংগতিপূর্ণ।

একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে পরিকল্পনা কমিশনের মতামতে বলা হয়েছে, আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিজিসিবির অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে রাজশাহী বিভাগে পৌঁছেছে। তবে লোড সেন্টার ঢাকায় এখনও নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ লোড সেন্টার ঢাকাসহ এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সরবরাহ করা যাবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ নির্ভরযোগ্যভাবে সঞ্চালনের জন্য কনটিনজেনসি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন নেটওয়ার্ক নির্মিত হবে, যার ফলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে প্রতীয়মান হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বড়পুকুরিয়া-বগুড়া-কালিয়াকৈর ৪০০ কেভি লাইন প্রকল্প (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হলো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, আদানির সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ রাজশাহী পর্যন্ত আনা গেলেও, সঞ্চালন লাইনের অভাবে সেখান থেকে ঢাকা পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ২৬০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে তা ঢাকায় আনা সম্ভব হবে। ফলে প্রকল্পটি খুবই সময়োপযোগী।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে উচ্চ ভোল্টেজের সঞ্চালন নেটওয়ার্ক নির্মিত হবে। এতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পর্যাপ্ত ও নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সহজ হবে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
সুন্দরবন দিয়ে পুশ-ইন করা ৭৪ জন বাংলাদেশি, ৪ জন ভারতীয় নাগরিক
একনেকে ৩ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার ৯ প্রকল্প অনুমোদন
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের স্ক্র্যাপ শেডে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
সর্বশেষ খবর
পাকিস্তান সফরের জন্য সরকারের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় বিসিবি
পাকিস্তান সফরের জন্য সরকারের ছাড়পত্রের অপেক্ষায় বিসিবি
‘মেসেজ দিতে রিকশা ভাঙা হয়েছিল, আয়ের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে’
‘মেসেজ দিতে রিকশা ভাঙা হয়েছিল, আয়ের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে’
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিতভাবে শেষ হলো জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতা
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বিতর্কিতভাবে শেষ হলো জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতা
২৭ সাংবাদিকসহ ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জাতীয়তাবাদী আইনজীবীর
২৭ সাংবাদিকসহ ৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন জাতীয়তাবাদী আইনজীবীর
সর্বাধিক পঠিত
বিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগবিমানবন্দরে তিন উপদেষ্টা, জেরার মুখে দায়িত্বরতরা
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল ইতিহাসে এটাই প্রথম: প্রধান বিচারপতি
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
নটর ডেম কলেজের আরেক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
এনবিআর ভেঙে দুই ভাগ হলো, অধ্যাদেশ জারি
জীববৈচিত্র্য বনাম জীবিকা: সেন্টমার্টিনে টানাপড়েন
জীববৈচিত্র্য বনাম জীবিকা: সেন্টমার্টিনে টানাপড়েন