X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

করোনা সংকটে বিপাকে পঞ্চগড়ের দুগ্ধ খামারি

সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, পঞ্চগড়
২৯ মার্চ ২০২০, ২২:১৭আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২০, ২২:১৯

করোনা সংকটে বিপাকে পঞ্চগড়ের দুগ্ধ খামারি করোনা সংকটে বিপাকে পড়েছেন পঞ্চগড় জেলার শত শত দুগ্ধ খামারি। হোটেল রেস্তোরাসহ দোকানপাট বন্ধ থাকায় হাটবাজারে লোকজনের চলাচলে নিষেধাজ্ঞায় দুধ বিক্রি হচ্ছে না অন্যদিকে দামও কমেছে কেজি প্রতি প্রায় ৩০ টাকা।

‘দুধের দাম কমেছে, দুধ বিক্রি হচ্ছে না, কিন্তু গোখাদ্যের দাম কমেনি’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন হতাশ খামারিরা। অন্যদিকে খামারিদের অন্যতম ক্রেতা প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটাও খামারিদের দুধ কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খামারিরা।

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বোদা পৌরসভার সাতখামার এলাকার গরুর খামারি নুর আলম পুলক জানান, খুচরা দুধ বিক্রেতারা ৫০ টাকা লিটারের দুধ বাজারে বিক্রি করছেন ২০ টাকা ৩০ টাকায়। আর গো খামারিদের দুধ বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু গো খাদ্যের দাম একটুকুও কমেনি বরং বেড়েছে। ফলে গরুর খাবার জোগান দিতে ধার-কর্জ করতে হচ্ছে। শুধু তার নয় একই অবস্থা একই এলাকার পঞ্চগড়ের পাঁচ শতাধিক দুগ্ধ খামারির।

পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছোট বড় প্রায় পাঁচ শতাধিক দুগ্ধ খামার রয়েছে। এসব খামারে পাঁচটি থেকে শুরু করে ৩০টি পর্যন্ত শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জারসি, শংকরসহ উন্নত জাতের গাভী রয়েছে। খামারিদের অধিকাংশই সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে খামার গড়ে তোলেন। প্রতিটি খামার থেকে দৈনিক ১০ লিটার থেকে ৬০ লিটার পর্যন্ত দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ খামারিরা (বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড) মিল্কভিটাসহ গোয়াল (ফরেয়া) ও বিভিন্ন হোটেল এবং দোকানপাটে সরবরাহ করে থাকেন।

প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন। কিন্তু গত ২৬ মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে হাটবাজার দোকানপাট বন্ধ, লোক চলাচল বন্ধ করে দেয়ায় দুধ কেনা-বেচা বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়ে যান দুগ্ধ খামারিরা। প্রতিদিন দুধ উৎপাদন হলেও বিক্রি করতে পারছেন না। কেউ কেউ বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাটের ফ্রিজে সংরক্ষণের সুযোগ পেলেও অধিকাংশই দুধ সংরক্ষণ করতে পারছেন না। অনেকেই ১০ থেকে ২০ টাকা লিটারে অল্প স্বল্প করে দুধ বিক্রি করছেন। অনেকে প্রতিবেশিদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন।

খামারিরা জানান, প্রতিদিন ছোট্ট একটি খামারে গাভীর খাবার ও পরিচর্যা বাবদ তাদের সর্বনিম্ন ৩/৪ হাজার টাকা লাগে। প্রতিদিনের দুধ বিক্রির টাকা থেকেই এই খরচের জোগান হতো। কিন্তু দুধ বিক্রি না হওয়ায় পুরো টাকাই তাদের ধারকর্জ বা ঋণ করে এনে খরচ করতে হচ্ছে।

খামারিরা আরও অভিযোগ করেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে বাজারে গোখাদ্য ব্যবসায়ীরা গাভীর প্রতিটি খাবারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন তাদের কঠিন সংকট চলছে। দুধ বিক্রির সুযোগ অথবা গো খাদ্যের দাম কমিয়ে দেয়াসহ সরকারিভাবে খামারিদের সহযোগিতা করার দাবি জানিয়েছেন।

দুগ্ধ খামারি নুর আলম পুলক জানান, গরুর খাবার গমের ভুষি ও মুশারির ডাল আগে ছিল এক হাজার ৫৫০ টাকা বস্তা। সেখানে বর্তমানে বস্তা প্রতি দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা বেড়ে এক হাজার ৭৫০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফিড ও ধানের ভুষি আগে বিক্রি হতো ৬শ’ টাকা সেখানে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ টাকায়। চালের খুদি আগে বিক্রি হতো ৮শ’ টাকায় বর্তমানে ৪শ’ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকায়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের দুগ্ধ খামারি আল আমিন জুয়েল জানান, পঞ্চগড়ে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। আমাদের খামারিদের প্রায় সবাই বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গাভী কিনে খামার করেছে। আমাদের প্রতিদিন দুধ বিক্রি করেই গাভীর খাবার, সংসারের খরচ ও কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হয়। করোনা পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে মিল্কভিটা দুধ কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ জিয়াবাড়ি এলাকার খামারি খোরশেদ আলম জানান, এমন একটা অবস্থায় বড় কোনো প্রতিষ্ঠান দুধ নিচ্ছে না,  হোটেলগুলোও বন্ধ। ১০ থেকে ২০ টাকা লিটার দরেও কেউ দুধ কিনছে না। এখানে এমন কোন ব্যবস্থা নেই যে দুধগুলো আমরা সংরক্ষণ করবো। এভাবে দুধ বিক্রি বন্ধ থাকলে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমরা খামারিরা পথে যাব। তিনি এ বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের  কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

একই দুরাবস্থার কথা জানালেন দুগ্ধ খামারি কাজল রেখা। তিনি বলেন,  প্রতিটি খামারে প্রতিদিন ৪০ লিটার থেকে শুরু করে ১০০ লিটার পর্যন্ত দুধ হয়। এই দুধ আমরা না পারছি সংরক্ষণ করতে না পারছি বিক্রি করতে। গরুর খাবারের টাকাটাও জোগাড় করা যাচ্ছে না।

পঞ্চগড় মিল্কভিটা দুগ্ধ কারখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. এ এস এম রাশেদ জানান, ‘খামারিদের দাবির কথা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেখান থেকে দুধ কেনার বিষয়ে আমরা এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমাদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। যে কোন সময় দুধ কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।’

পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম জানান, ‘মিল্কভিটা দুধ কেনা বন্ধ করে দেওয়ায় পঞ্চগড়ের খামারিরা দুর্ভোগে পড়েছেন। আমরা খামারিদের কথা চিন্তা করে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষকে দুধ কেনার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা কয়েকদিনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে হলেও দুধ কেনার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।’

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২ জুলাই, ২০২৫)
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
ক্লাব বিশ্বকাপে এমবাপ্পের অভিষেক, জুভেন্টাসকে হারিয়ে শেষ আটে রিয়াল
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
রংপুরে নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে এনসিপির বিশাল পদযাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক
এনবিআরের আরও ৫ শীর্ষ কর্মকর্তার দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক