চলতি বাজেট অধিবেশনের কার্যদিবসে আরও কাটছাঁট করা হয়েছে। অধিবেশনের কার্যদিবস পূর্বপরিকল্পিত ১২ দিনের পরিবর্তে ৮/৯ দিন চলতে পারে। এক্ষেত্রে বাজেটের ওপর আলোচনার দিন ও ঘণ্টা কমছে। পরিবর্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা হবে মাত্র দুইদিন ২৩ ও ২৪ জুন। অবশ্য ২৯ জুন বাজেটে অর্থ বিল পাসের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেটের সমাপনী আলোচনায় অংশ নেবেন। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, দেশে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার এবং মন্ত্রিসভার একজন সদস্য, একজন সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি করোনায় মারা যাওয়ার কারণে বাজেট অধিবেশনে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমানো-বাড়ানোর কোনও সিদ্ধান্ত নয়। আমরা যে কয়দিন নির্ধারণ করবো সেই কয়দিন আলোচনা হবে।’
প্রসঙ্গত, অধিবেশন কতদিন চলবে তা প্রতি অধিবেশনের আগে অনুষ্ঠিত কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠক হয়নি। কার্যউপদেষ্টা কমিটির প্রধান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী তার ক্ষমতা বলে কমিটির অন্যতম সদস্য সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বৈঠকের সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
জানা গেছে, এবার বাজেট অধিবেশন কতদিন চলবে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে সংসদ সচিবালয় থেকে একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা হয়। ওই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশন ১২ কার্যদিবস চলার কথা জানানো হয়।
ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০ জুন বুধবার বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরুর পর শোক প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শেষ। পরের দিন ১১ জুন বাজেট পেশ ও অর্থ বিল উত্থাপন। এরপর ১২ ও ১৩ জুন বৈঠক মুলতবি রেখে ১৪ এবং ১৫ জুন সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করে সম্পূরক বাজেট পাস করা হবে। পর দিন শুরু হবে প্রস্তাবিত সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৬ ও ১৭ জুন দুইদিন আলোচনা শেষে ১৮ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি। এরপর ২২ থেকে ২৪ জুন আরও তিন দিন এ বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫ থেকে ২৮ জুন চারদিনের বিরতি। ২৯ জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হওয়ার কথা। এদিনই পাস হবে অর্থবিল। পরদিন ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে সেদিন সমাপ্তি ঘোষণা।
কিন্তু পরিবর্তিত সিডিউল অনুযায়ী আজ ১৫ জুন থেকে ২৩ জুন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বৈঠক মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। এ অনুযায়ী ২৩ ও ২৪ জুন বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে, পূর্বপরিকল্পিত ২৯ জুন বিরোধীদলীয় উপনেতা, সংসদ নেতা ও অর্থমন্ত্রীর বাজেট আলোচনা এবং অর্থবিল পাস আর ৩০ জুনের বাজেট পাসের সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত রয়েছে। অবশ্য জুলাই মাসের ৮/৯ তারিখে অধিবেশন করার যে পরিকল্পনা রয়েছে সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।
এদিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পূরক ও সাধারণ বাজেটের ওপর ২০ থেকে ২২ ঘণ্টার মতো আলোচনার সিদ্ধান্ত হলেও তা অর্ধেক কমিয়ে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টায় সীমিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সবকিছু করছি করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি চিন্তা করে। অধিবেশন কতদিন চলবে তার সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার। সংক্রমণ পরিস্থিতির বিবেচনায় তিনি হয়তো কার্যদিবস যতদূর সম্ভব কমিয়ে আনছেন।’
স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, ‘এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও সিদ্ধান্ত তো জানানো হয়নি। আমরা যেভাবে চাই সেভাবে চলবে। বিষয়টি ফ্লেক্সিবল রাখা হয়েছে। আমরা যে কয়দিন নির্ধারণ করবো সেই কয়দিন আলোচনা হবে।’
৩০ জুনেই অধিবেশন শেষ হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্পিকার জানান, ‘আগে ৩০ জুন বাজেট পাস করি, তারপর সিদ্ধান্ত নেবো।’
প্রসঙ্গত সচরাচর বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হয়। অধিবেশনে সম্পূরক বাজেটের ওপর দুই থেকে চার দিন এবং সাধারণ বাজেটের ওপর ১২ থেকে ১৫ দিন আলোচনা হয়। বাজেট নিয়ে ৫০ থেকে শুরু করে ৬৫ ঘণ্টার মতো আলোচনা রেকর্ড রয়েছে।
সংসদের আরও ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত
সংসদ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আরও ২৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে সোমবার (১৫ জুন) দুপুর পর্যন্ত আক্রান্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৯ জন। এর আগে সেখানে ৪৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া সংসদে দায়িত্বপালনকারী ৮২ আনসার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সংসদ মেডিক্যাল সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার আরিফুল হক সোমবার জানান, ‘এখন পর্যন্ত সংসদের ৬৯ কর্মকর্তার শরীরে আমরা করোনা পজিভিট পেয়েছি। সবাই আমাদের নির্দেশনা নিয়ে বাসাতেই আছেন।’