X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুবলীগের সেই আনিসের বিরুদ্ধে ১২৩ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে চার্জশিট

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৪আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:৫৪

যুবলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১২৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। এছাড়া তার নিজ নামে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। কাজী আনিসুর রহমানের স্ত্রী সুমি রহমানের নামে দুই কোটি ৬১ লাখ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। ক্যাসিনো ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে আনিস দম্পতি অবৈধভাবে এসব অর্থ আয় করেছেন। এই দম্পতির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে দুদক। দুদক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দুদক সূত্র জানায়, ক্যাসিনো ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলাটি তদন্তের জন্য উপ-পরিচালক মোহাম্মদ গুলশান আনোয়ার প্রধানকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্তকালে কাজী আনিসুর রহমানের নামে ১৮ কোটি ৮৯ লাখ এক হাজার ৩৩৫ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া যায়। এসব সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় দেখা যায় মাত্র তিন কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯ টাকা। অর্থাৎ আনিসুর রহমান মোট ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকা আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিভাবে অর্জন করেছেন।

দুদক কর্মকর্তারা জানান, আনিসুর রহমানের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নিজ নামে এবং তার প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫টি হিসাব পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক হিসেবে ২০১১ সাল থেকে মোট ১২৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ২১৩ টাকা জমা প্রদান করেন। এর মধ্যে শেয়ার ব্যবসাসহ অন্যান্য মাধ্যমে তার আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৫ টাকা। বাকি ১২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৮ টাকার লেনদেন সন্দেহজনক। তিনি অনৈতিক ও অবৈধভাবে অপরাধলদ্ধ আয়ের উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে এই অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর এবং রূপান্তর করেছেন।

দুদক সচিব ড. মু আনোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন করে কাজী আনিসুর রহমান মানিলন্ডারিং আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের আলোকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৭/১ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪/২ ও ৪/৩  উপধারা মোতাবেক চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানায়, কাজী আনিসুরের স্ত্রী সুমি রহমানের নামে একই সময়ে পৃথক একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। মামলার আগে প্রাথমিক অনুসন্ধানে সুমী রহমান ১ কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়। তবে মামলার তদন্তে তার কাছে যে সম্পদ পাওয়া যায় তার মূল্য ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকা। এর মধ্যে তার জ্ঞাত আয় পাওয়া যায় মাত্র ২ লাখ টাকা। বাকি ২ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকা তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এক্ষেত্রে কাজী আনিসুর রহমান বিভিন্ন উপায়ে স্ত্রীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন। এজন্য সুমী রহমানের পাশাপাশি পৃথক ওই মামলায় কাজী আনিসুর রহমানকেও চার্জশিটভুক্ত আসামি করা হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কাজী আনিসুর রহমান ২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করতেন। বছর পাঁচেকের মাথায় তিনি যুবলীগের দফতর সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর থেকেই মূলত উত্থান ঘটে আনিসের। সামান্য বেতনের চাকরি করা আনিস শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। রাজধানীর ধানমন্ডি, শুক্রবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় আলিশান ফ্ল্যাট, জমিসহ গোপালগঞ্জে পেট্রোল পাম্প কেনেন। যুবলীগের সাবেক সভাপতির হাত ধরে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসা, যুবলীগের পদ পাইয়ে দেওয়াসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেন।

সূত্র জানায়, গত বছরের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে কাজী আনিসের নাম আলোচনায় আসে। এর পরপরই কৌশলে কাজী আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমান দেশ ছেড়ে যান। দীর্ঘ দিন ধরে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পলাতক।

 

/এনএল/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
৬ মামলায় জামিন পেলেন বিএনপি নেতা গয়েশ্বর
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
চিকিৎসক ছাড়াই রক্ত ট্রান্সফিউশনের সময় হাজির ম্যাজিস্ট্রেট
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি
আরও বিস্তৃত হবে তাপপ্রবাহ, তবে সিলেটে হতে পারে বৃষ্টি