X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

‘ভাষা আন্দোলনের হরতালে খান এ সবুরের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছিল’

হেদায়েৎ হোসেন, খুলনা প্রতিনিধি
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৩:০৪আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৪:১৭

ভাষা সৈনিক এম নুরুল ইসলাম

‘১৯৫২ সালে খুলনায় ভাষা আন্দোলনের হরতাল কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছিল তৎকালীন মুসলীগ লীগ নেতা খান এ সবুরের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। খান এ সবুর মোংলা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করেছিল। ওই সময় পুলিশ লাইন এলাকায় খান এ সবুরের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হরতালের পিকেটারদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ভাষা আন্দোলনের পক্ষের অনেকে আহত হন। তবে আন্দোলকারীদের প্রতিরোধের মুখে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা টিকতে পারেনি।’ ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে এসব কথা বলেছেন খুলনার ভাষাসৈনিক এম নুরুল ইসলাম।

এম নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের শুরুতে ব্যয়ভার বহনের জন্য টিনের বাক্স পদ্ধতি চালু করা হয়। সবার কাছে যেতাম, কেউ ফিরিয়ে দিত না। এমনকি থানার দারোগা ওসিরাও টাকা দিত। খুলনায় ভাষা আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল শহীদ হাদিস পার্ক। ১৯৫২ সালে দেশ যখন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে উত্তাল, সেসময় খুলনার মানুষও মাঠে নেমেছিলেন। তৎকালীন আন্দোলনের নেতৃত্বে অনেকের সঙ্গে আমিও ছিলাম। অন্যরা হলেন গাজী শহিদুল্লাহ, মাজেদা আলী, আবু মোহাম্মাদ ফেরদাউস, এ কে এম শামসুদ্দিন প্রমুখ। আন্দোলন চলাকালে পুলিশ অনেককে গুলি ও গ্রেফতার করে। সে সময় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তৎকালীন বিএল কলেজের ছাত্রনেতা আনোয়ার হোসেন।’

আন্দোলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘লিফলেট বিতরণ করতে গিয়ে একবার পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলাম। ওই সময় একদিন জেলে থাকতে হয়েছে। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সাধারণ ছাত্রদের ওপর গুলি হয়। সেই খবর খুলনায় জানা যায় হাদিস পার্কে তৎকালীন সময়ে বসানো একটা টাওয়ারের মাধ্যমে। ওই খবর পেয়ে খুলনার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন, যা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। আমরা কে ডি ঘোষ রোড থেকে মিছিল নিয়ে বের হলাম। তখন বেগম মাজেদা আলীর নেতৃত্বে করোনেশন স্কুলের সামনে থেকে নারীদের একটি মিছিল বের হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের সময় কেডি ঘোষ রোডে তৃপ্তি নিলয় নামে একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। সেখানে আমরা চা খেতাম, আড্ডা দিতাম। ভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত ছোটখাটো সিদ্ধান্তগুলো আমরা ওখান থেকেই নিতাম। বর্তমানে ওই জায়গায় বিভিন্ন ব্যাংক-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ভাষাসৈনিক এম নুরুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের জুলাই মাসে খুলনা মহানগরীর ২০, বাবু খান রোড এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম ডা. খাদেম আহমেদ, মা আসিয়া খাতুন। এম নুরুল ইসলাম উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ছাত্রজীবনে নিখিল বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগের খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক, ১৯৫২ সালে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্ট, ১৯৫৭ সালে ন্যাপের খুলনা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ১৯৬২ সালে খুলনার জাহানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, ১৯৬৮-৬৯ সালের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক, ১৯৭২ সালে ন্যাপের খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য, ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদী যুক্তফ্রন্টে যোগদান, ১৯৭৯ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ২০০১ সালে খুলনা-৪ আসন (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

 

/এএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অবাধে বালু উত্তোলন করে রাতের আঁধারে পাচার
অবাধে বালু উত্তোলন করে রাতের আঁধারে পাচার
ইইউ’র নিষেধাজ্ঞাকে ভণ্ডামি বললেন পুতিন মিত্র
ইইউ’র নিষেধাজ্ঞাকে ভণ্ডামি বললেন পুতিন মিত্র
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির