X
রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫
২২ আষাঢ় ১৪৩২

মাঝের চরে এখন বড় সংকট বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটের

পিরোজপুর প্রতিনিধি
৩১ মে ২০২০, ০১:১৭আপডেট : ৩১ মে ২০২০, ০১:৩৭

মাঝেরচরে আম্পান ঝড়ে ধসে পড়া একটি বাড়ি।

ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে চলে গেছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। তবে এর প্রভাবে ভয়াবহ ক্ষতির শিকার হয়েছেন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা। উপকূলীয় বেশিরভাগ এলাকায় বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় বা ধসে যাওয়ায় পানি ঢুকে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের সংকট। সাতক্ষীরা আর খুলনার কয়রায় বেশি ক্ষতি হলেও পিরোজপুর জেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বাইরে বলেশ্বর নদীর কোলে জেগে ওঠা মাঝের চরে এ ক্ষতি কোনও অংশেই কম নয়। এখানে মাঠের সবজি শতভাগ ডুবিয়ে দিয়ে গেছে আম্পান। ধসিয়ে দিয়েছে বেশিরভাগ বাড়ি-ঘর। খাবার পানির উৎসগুলো নোনা পানি ঢুকে আপাতত নষ্ট হয়ে আছে। তবে ঝড়ে টয়লেটগুলো ভেঙে পড়ায় আর খাবার পানি সংরক্ষণে প্রতি বাড়িতে থাকা ড্রামগুলো ভেসে যাওয়ায় তৈরি হয়েছে বিশাল মানবিক সংকট। বেতমোর- রাজপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শহীদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর-রাজপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে অবস্থিত মাঝের চর। এ চরের মানুষের জীবন জীবিকা চলে মূলত কৃষিকাজ আর নদীতে মাছ ধরে। এ চরটি উত্তর দক্ষিণমুখী। মূল ভূখণ্ড থেকে বলেশ্বর নদীবেষ্টিত এ চরে  ট্রলারে যেতে ৭ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে। এই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রায় ৭শ’একর জমির এ  চরে লোকজন বসতি গেড়েছে ১৯৬০ সাল থেকে। সরকার ১৯৬৫ সালের সেটেলমেন্টের মাধ্যমে লোকজনকে জমি দিয়েছে। চরে বর্তমানে বসবাস করছে ২শ’২০টি পরিবার। ঝড়ের কারণে এখানে এখন খাবার পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার খুব সমস্যা, বলেন তিনি।

মাঝের চরে ধসে পড়া এক বাড়ির উঠানে বসা এক নারী।

কথা হয় চরের বাসিন্দা ৪৪ বছর বয়সী আলম জমাদ্দারের সঙ্গে। তিন পুরুষের বসতি এ চরে তাদের। তিনি বলেন, আমার বাবায় আফুড় (হামাগুড়ি) দেওয়া অবস্থায় দাদায় আমার বাবাকে নিয়ে মাঝের চরে বসতি গেড়েছে।

চরের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে নিঃশ্বাস ছেড়ে তিনি  বলেন, ‘অবস্থা ভালো না। নদীর পাশ থেকে যারা বেড়িবাঁধের মধ্যে ছিলাম তারা ঝড়ের সময়  সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিলাম। আম্পানে দক্ষিণ- পশ্চিম অংশের বাঁধ ভাইঙ্গা যে চোডে পানি উঠছে তাতে ঘরের পোতা (ভিটি) সব খইচ্চা লইয়া গ্যাছে।  চরের  অনেক টয়লেট, পানির ট্যাংকি ভাসাইয়া লইয়া গেছে। সাইক্লোন শেল্টারের টয়লেটের অবস্থাও বেহাল। যারা ঘরে ফিরেছেন তারা ঝোঁপ জঙ্গলে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার কাজ সারেন।’

আলম জমাদ্দার বলেন, ‘আমার ঘরের সঙ্গে একটি মুদি দোকান ছিল। তাতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মালামাল ছিল। পানির তোড়ে সব ভাইসা গেছে।’ 

মাঝেরচরে এতটাই পানি উঠেছে যে ঘরের ভিটি ও মেঝেকে কাদা বানিয়ে দিয়ে গেছে।

চরের উত্তর অংশের বাসিন্দা জাফর আকন। নদীতে মাছ ধরা ও সবজি চাষ তার পেশা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ২শ’ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়া, মুগডাল এবং রেখা চাষ করেছিলাম। ৭০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। মাত্র ১৫ হাজার টাকার সবজি ঘরে নিতে পেরেছি। সব সবজি ঘরে নিতে পারলে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পেতাম। কিন্তু, আম্পানের থাবায় সব শেষ হয়ে গেলো। তার মতো মাঝের চরের অনেক সবজি চাষি ও মৎস্যজীবী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে তিনি জানান।

চরে থাকা লোকজন  জাল হারিয়েছে, তুফানে নৌকা ফেটেছে তাদের।  জাফর আকন বলেন, পানি-কাদার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলতে হয় আমাদের। ঝড়ে টয়লেট ভেসে গেছে। বিশুদ্ধ পানির  সংকট প্রকট। চরের মাঝে থাকা অল্প কিছু পরিবারে কেবল আম্পানের চোট বেশি লাগেনি।

মাঝের চরে একতলা ঘরটার পেছনেই নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে।

চরের বাসিন্দা সোলায়মানের সঙ্গে যখন ফোনে কথা হয় তখন তিনি মাছ শিকারে বলেশ্বর নদীতে। এ সময়ে তিনি বলেন, নদীতে প্রচণ্ড তুফান।  কাজ না করলে খাবো কি? আম্পানের পরে অবশ্য ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এ সময় তিনি বলেন, আম্পানে চরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে। আমরা দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবি জানাই। আমরা বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির কষ্টে ও টয়লেট সমস্যায় আছি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম জানান, উলুবাড়িয়া, নিজামিয়া ও মাঝের চর নিয়ে ৯নং ওয়ার্ড। আম্পানে মাঝের চরের অনেক পরিবারের ঘর ভেঙে গেছে। আর প্রায় দেড়শ’ পরিবারের টয়লেট ভেঙে বা ভেসে গেছে। বিশুদ্ধ পানির ড্রাম ভেসে গেছে। সিডরের পর বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ ড্রামগুলো দেওয়া হয়েছিল। তিনি আরও জানান, ৯নং ওয়ার্ডের উলুবাড়িয়া, নিজামিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধের বাইরে থাকা পশ্চিম পাশের আরও ৮০টি পরিবার আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মাঝেরচরে ওপর থেকে নিচের দিকে নামছে পানি।  (২৩ মে’র ছবি)

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিহির মণ্ডল জানান, আম্পানের পরপরই  মাঝের চরসহ এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। মাঝের চরসহ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের যাতে টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির সমস্যা দূর হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মালয়েশিয়ায় ক্রেন দুর্ঘটনায় যশোরের যুবকের মৃত্যু
মালয়েশিয়ায় ক্রেন দুর্ঘটনায় যশোরের যুবকের মৃত্যু
ফিরে দেখা: ৬ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৬ জুলাই ২০২৪
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় মাসে ২২২ জন নিহত
ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় মাসে ২২২ জন নিহত
হোসেনি দালান: কারবালার শহীদদের প্রতীকী নিদর্শন
হোসেনি দালান: কারবালার শহীদদের প্রতীকী নিদর্শন
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় হাত: চাপের মুখে প্রবীণ ও মধ্যবিত্তরা
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
সাবেক সিইসি এ টি এম শামসুল হুদা মারা গেছেন
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
কনস্টেবলকে ‘স্যার’ ডেকে ধরা পড়লেন ভুয়া এসআই
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল
আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতীকী কফিন মিছিল