বগুড়া ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিন ঝিমলিকে বদলির পর শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, চাঁদাবাজি, ভর্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে করা মামলায় ছাত্রলীগ নেতা সজল কুমার ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ বদলি এবং মঙ্গলবার সকালে শেরপুরের ছোনকা বাজার থেকে ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। তারা এখন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, সজল ঘোষ বগুড়া শহরের রহমাননগর এলাকার মৃত সুমেন ঘোষের ছেলে। সজল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্র না হয়েও তিনি প্রায় এক যুগ ধরে আইএইচটির ছাত্রাবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষ দখলে রাখেন। সেখানে তিনি ভর্তি বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, অসামাজিক কার্যকলাপসহ নানা অপরাধ করেন। অধ্যক্ষ ডা. ঝিমলির বিরুদ্ধে তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সজল ঘোষকে গ্রেফতার ও অধ্যক্ষ ডা. ঝিমলিকে অপসারণের দাবিতে আইএইচটির শিক্ষার্থীরা গত ২৯ আগস্ট থেকে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সর্বশেষ রবিবার বেলা ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের সামনে শেরপুর সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ ক্যাডার সজল ঘোষকে গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেয়। তখন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যক্ষকে অপসারণ ও সজল ঘোষ গ্রেফতার হওয়ায় তারা খুব খুশি। তবে তারা এখন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) শরাফত ইসলাম বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গোপনে খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে শেরপুর উপজেলার ছোনকা বাজার এলাকা থেকে সজল কুমার ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে, সোমবার সন্ধ্যায় আইএইচটির আলোচিত অধ্যক্ষ ডা. আমায়াত-উল-হাসিন ঝিমলিকে বাগেরহাটের ম্যাটসের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে তাকে মাদারীপুরের ম্যাটসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আইএইচটির সিনিয়র লেকচারার ওমর ফারুক মীরকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
বদলির আদেশে বলা হয়, আগামী সাত দিনের মধ্যে বদলিকৃত স্থানে যোগদান করতে হবে। না হলে আট কার্যদিবসে স্ট্যান্ড রিলিজ হিসেবে গণ্য হবেন।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত আদেশে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে ডা. ঝিমলি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
এর আগে মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদফতরের অল্টারনেটিভ মেডিসিন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. গউসুল আজিম চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটির অপর দুজন সদস্য হলেন– ঢাকা আইএইচটির সহকারী অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান এবং বগুড়া আইএইচটির জুনিয়র প্রভাষক ডা. আব্দুল কাদের। তারা তদন্ত করতে সোমবার বগুড়া আইএইচটিতে আসেন। দিনভর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। ১১ জন শিক্ষার্থীর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়।
কমিটির সদস্যরা জানান, শিগগিরই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেবেন তারা।