X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

পি কে হালদারের কুমিরের খামার ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি

আতাউর রহমান জুয়েল, ময়মনসিংহ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:২৯আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২৩:২৯

৩৮ কোটি টাকায় ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারের কুমিরের খামারটি নিলামে কিনে নিচ্ছে উদ্দীপন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। হাইকোর্টের অনুমোদন পেলে এই টাকা পরিশোধ করে খামারটি বুঝে নিতে চায় সংস্থাটি। ইতোমধ্যেই প্রায় ৮ কোটি টাকা জমা দিয়ে উদ্দীপন খামারটি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাকি টাকা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কুমিরের খামারটির নাম রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড নামে ওই কুমিরের খামারের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক জানান, খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পি কে হালদারের ঋণ। চলতি বছরের শুরুতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত পরিচালনা পর্ষদে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান। তখন এই কুমির খামারের মূল্য ধরা হয়েছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা। মাত্র আট মাসের ব্যবধানে এই পরিচালনা পর্ষদের তত্ত্বাবধানে খামারটি এখন উন্নতির দিকে। তারা দায়িত্ব নেওয়ার পর কুমিরের খাবার জোগান দিতে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে এই খামারে টিকিটের বিনিময়ে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

এই খামার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কুমিরের চামড়া রফতানি করা প্রায় ১৪ একর জমির ওপর ২০০৪ সালে উথুরা ইউনিয়নের হাতিবের গ্রামে ৭৫টি কুমির মালয়েশিয়া থেকে এনে এই রেপটাইলস ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন মেজবাউল হক ও মোস্তাক আহমেদ নামে দুজন ব্যবসায়ী। এই খামার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কুমিরের চামড়া রফতানি করা। কিন্তু ২০১২ সালে আর্থিক প্রয়োজনে ফার্মটির মালিকানা হস্তান্তর করেন ঋণ কেলেঙ্কারির হোতা বহুল আলোচিত পি কে হালদারের কাছে। কুমির খামারটি সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেন পিকে হালদার। জামানত হিসেবে খামারের জমি ব্যবহার করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে খামারের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ৪ কোটি ২৮ লাখ মূল্যের বন্ধকী জমির বিপরীতে এখন বকেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা।

খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক আরো জানান, খেলাপী ঋণ পরিশোধে নিলামে তোলা হয় খামারটি। খামারটি কিনতে সর্বোচ্চ ৩৮ কোটি টাকা দামে আগ্রহী হয় উদ্দীপন নামক একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা।

কুমিরের ছানা এদিকে, ২০১৯ সালে অর্থ কেলেংকারীতে পি কে হালদার জড়িয়ে পড়ায় এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় খামারটিতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বন্ধসহ চরম অব্যবস্থাপনায় কুমিরের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। পরে বিষয়টি নিয়ে একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফার্মটি পরিচালনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. নাইম আহমেদকে চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কুমির বিশেষজ্ঞ এনামুল হককে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আরও চার জনকে পরিচালক করে ছয় সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনামুল হক বলেন, ‘নানা অব্যবস্থাপনা, টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক সংকট ও খাদ্য সংকটে কুমির ফার্মটির অচলাবস্থা ছিল। কুমিরগুলোর যথোপোযুক্ত পরিচর্যা না হওয়ায় এবং খাদ্য সংকটে নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছিল। মারাও যাচ্ছিল। বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ত্বরিত পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করায় রোগবালাই ও মৃত্যু রোধ সম্ভব হয়েছে। জীর্ণ এই খামারটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করতে এবং আয়ের উৎস বাড়াতে নানা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ফার্মের খাদ্যের ব্যয় মেটাতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।’

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খামারটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে খামারটির ব্যবস্থাপক ডা. আবু সাইম মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর খামারটি থেকে ২০১০ সালে জার্মানিতে রিসার্চের জন্য ৬৭টি ফ্রোজেন কুমির এবং ২০১৪ সাল থেকে সর্বশেষ ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট এক হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রফতানি করা হয়। যা থেকে আয় হয় আনুমানিক ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা। প্রতিটি কুমিরের চামড়ার আন্তর্জাতিক বিক্রয় মূল্য ৫শ’ থেকে ৬শ’ ডলার। বিগত দুই দশকের ব্যবধানে খামারটিতে কুমিরের সংখ্যা এখন তিন হাজার ৭শ’।’

উল্লেখ্য, ব্যাগ, বেল্ট ও জুতা তৈরিতে কুমিরের চামড়া ব্যবহার করা হয়। এর দাঁত দিয়ে তৈরি হয় গয়না, হাড় থেকে সুগন্ধি। কুমিরের পেটের দিকের চামড়া প্রতি সেন্টিমিটারের দামে ১৫ ডলার। কেজি প্রতি মাংস ৪০ থেকে ৫০ ডলারে বিদেশে রফতানি ও বিক্রি হয়। বন বিভাগের অনুমোদন পেলে খুব শিগগিরই কুমিরের চামড়ার পাশাপাশি মাংস, হাড়, দাঁত বিদেশে রফতানির মাধ্যমে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হবে।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
‘তীব্র গরমে’ মারা যাচ্ছে মুরগি, অর্ধেকে নেমেছে ডিম উৎপাদন
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
পাঁচ ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন
সর্বশেষ খবর
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
এক উপজেলায় ১৩ প্রার্থীর সবাই আ.লীগের
এক উপজেলায় ১৩ প্রার্থীর সবাই আ.লীগের
শিরোপাজয়ী দল কি কোটি টাকা পাবে?
ফিরছে সুপার কাপশিরোপাজয়ী দল কি কোটি টাকা পাবে?
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক