সৌন্দর্য হারাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা। যত্রতত্র দোকানপাট, ব্যবসায়ীদের দ্বারা পর্যটকদের হয়রানিসহ নানা কারণে এ সৈকত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পর্যটকরা। এখন আগের মতো পর্যটকদের আনাগোনা নেই এখানে। তবে এ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে মাদক কারবারিরা সক্রিয় থাকার অভিযোগ আছে। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের অভিযানে এর সত্যতাও মিলেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর সাগরিকা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর উপকূলে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘চিটাগং সিটি আউটার রিং রোড’ নির্মাণ করেছে। সেই প্রকল্পের আওতায় শতকোটি টাকা ব্যয়ে সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়। সৈকতে লাগানো ফুলের গাছ ও বাগান নষ্ট করে তৈরি করা হয়েছে দুই শতাধিক দোকান।
সরেজমিন দেখা গেছে, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ঘিরে অসংখ্য দোকানপাট গড়ে উঠেছে। যেখানে বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এসব দোকানে বিক্রি হচ্ছে প্রসাধন সামগ্রী, ঝিনুকের পণ্য এবং খাবারের দোকান। মূল সৈকতে এসব দোকান গড়ে ওঠার কারণে হাঁটাচলায়ও ব্যাঘাত ঘটছে পর্যটকদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সমুদ্রসৈকতে যত্রতত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব অবৈধ দখলদারদের কারণে সৌন্দর্য হারাচ্ছে সৈকত। প্রতি সপ্তাহে কয়েকটি করে বাড়ছে দোকানের সংখ্যা। এ সৈকতের নিয়ন্ত্রণকে ঘিরে গড়ে উঠেছে একটি চক্র। গড়ে উঠেছে ‘পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত হকার ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবী সমবায় লিমিটেড’ নামে একটি সংগঠনও। এ সংগঠনের নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ১০০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা এবং দোকানগুলো বসানোর সময় ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার অভিযোগ আছে। এ টাকা নেওয়া এবং দোকান বসানোর নেতৃত্বে ওই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ করিমের নাম এসেছে।
চট্টগ্রামের একটি অনলাইন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের অবৈধ দোকানপাট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পর্যটকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছিলেন। সংবাদ প্রকাশের জন্য আমি সৈকতে গিয়ে বেশ কিছু দোকানি এবং পর্যটকের সঙ্গে কথা বলি। পর জানতে পারি এসব নিয়ন্ত্রণ করেন মাসুদ করিম নামে এক ব্যক্তি। অফিসে গিয়ে তার বক্তব্য জানতে ফোন করি। কথোপকথনের এক পর্যায়ে তিনি উকিল নোটিশ প্রদান এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়-ভীতি প্রদান করেন।’
এ ঘটনায় ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরের খুলশী থানায় হুমকির বিষয়ে মাসুদ করিমের বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন রবিউল।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাসুদ করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দোকান বসানো কিংবা টাকা নেওয়ার সঙ্গে জড়িত নই। এসব করছে মুসা এবং ওয়াহিদসহ আরও কয়েকজন। তারাই এখানে দোকান বসাচ্ছে, মাইক্রো স্টেশন বসিয়ে টাকা নিচ্ছে। তবে আমি সমুদ্রসৈকত পাহারা দিই। সৈকত দিয়ে কেউ কোনও অবৈধ মালামাল আনলে প্রশাসনকে তথ্য এবং ধরিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করছি।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কিনা? জানতে চাইলে মাসুদ করিম বলেন, ‘ভালো কাজে অনুমতি নিতে হয় না। আমি করে যাচ্ছি। আমি এ পর্যন্ত একাধিক মাদকের চালান এবং চোরাই তেলের চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তথ্য দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছি। যার মধ্যে আছে বিদেশি বিয়ার এবং ইয়াবার চালান।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় দায়িত্বরত পরিদর্শক ইসরাফিল মজুমদার বলেন, ‘এ সৈকতে অবৈধভাবে ২০০টির মতো দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের জন্য সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। যেহেতু এখানে দোকান বসে গেছে, সেহেতু দোকানগুলো উচ্ছেদ করতে ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন। আমরা এ সৈকতের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) লিখিতভাবে চিঠি দিয়ে উচ্ছেদ করার জন্য বলেছি। তারা যখন অভিযান পরিচালনা করবে তখন আমরা সহযোগিতা করবো। তবে এখানে পর্যটক কমেছে শীতের কারণে।’
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের দোকানপাট নিয়ে আসলে আমরা সমস্যায় আছি। ওখানে মূলত তিনটি সিন্ডিকেট আছে যারা আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায় এবং ঝামেলা পাকাতে চায়। এটি নিয়ে আমাদেরও মাথাব্যথা আছে। এসব দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে। হয়তো শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
এ বিষয়ে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী ও আউটার রিং রোডের প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন্ শামস্ বলেন, ‘পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে অবৈধভাবে অনেক দোকান বসেছে। শিগগিরই এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এ সৈকতকে আরও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে আমরা দুটি আন্তর্জাতিক মানের পাবলিক টয়লেট করার সিদ্ধান্তও নিয়েছি। যার কাজ অতি শিগগিরই শুরু হবে।’