নিম্নচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে ৯ দিনের টানা বৃষ্টিতে ভোলার অধিকাংশ এলাকার আমনের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। সেইসঙ্গে বিভিন্ন এলাকার নিচু জমির শাকসবজি ও আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ায় নতুন করে বীজতলা তৈরির সময় না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় এক লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১১ হাজার ৪৪ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চাষিরা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এসব ফসল চাষ করেছেন। কিন্তু গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ আর জোয়ারের কারণে ডুবে আছে শত শত হেক্টর জমির আমনের বীজতলা, পচে গেছে শাকসবজি। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ধান। সবমিলিয়ে দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে কৃষকরা জানিয়েছেন, গত ৯ দিনের টানা বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে আছে ১১ হাজার ৮১০ হেক্টর জমির বীজতলা। পানি নিষ্কাশন না হলে বীজতলার চারা পচে যাবে। এ অবস্থায় আবার উচ্চ দামে বীজ কিনে রোপণ করতে হবে। পানিতে ডুবে থাকায় কোনও কোনও ক্ষেতের চারায় পচন ধরেছে। একই অবস্থা শাকসবজির।
এতে চরমভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তাদের দাবি, অন্তত ২০ হাজার হেক্টর ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের কৃষক ইয়াসিন আলী বলেন, ‘সমিতি থেকে কিস্তির ওপর টাকা নিয়ে ১ একর জমিতে লাউ, চালকুমড়া ও শসা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টির পানিতে সবগুলো ফসলে পচন ধরেছে। এখন কীভাবে চলবে সংসার আর কীভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক জাবেদ হোসেন বলেন, ‘ধারদেনা করে ১ একর জমিতে আমনের বীজতলা তৈরি করেছি। বৃষ্টির পানিতে পচে গেছে। পাশাপাশি আরও কিছু জমিতে শসা, বরবটি ও লাউ চাষ করেছিলাম। টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবে ফসলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বেকায়দায় পড়ে গেছি।’
একই এলাকার কৃষক কালাম ও মিজান জানিয়েছেন, তাদের আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও জমি থেকে বৃষ্টির পানি নামেনি। এর মধ্যে বৃষ্টি অব্যাহত আছে। এর ফলে জমিতে আউশ ধান পচে যাবে।
এ বছর জেলায় এক লাখ ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর। তিনি বলেন, ‘গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ বীজতলা ডুবে গেছে। সেইসঙ্গে শাকসবজির ক্ষেতও ডুবেছে। সবমিলিয়ে অন্তত দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পানি দ্রুত নেমে গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করবো, তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে; কী পরিমাণ জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’