X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জাল কাগজপত্র দেখিয়ে চবিতে ঠিকাদারি পান জি কে শামীম

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১১:২৭আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৭:০৫

জি কে শামীম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন কলা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করে। ওই সময় কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই ৭৫ কোটি টাকার কাজটি পায় যুবলীগ নেতা জি কে শামীমের মালিকানাধীন মেসার্স দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স-জিকেবিএল (জেভি)। অভিযোগ রয়েছে, জি কে বিল্ডার্স তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একটি অংশকে কাজে লাগিয়ে জাল কাগজপত্র দাখিল করে কাজটি হাতিয়ে নেয়। ওই সময় জি কে বিল্ডার্সকে কাজ পাইয়ে দিতে মাত্র দু’টি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ করে দেয় ছাত্রলীগের ওই অংশ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিভাগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবি ছাত্রলীগের তৎকালীন ছাত্রনেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি গ্রুপের যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে কাজটি জি কে বিল্ডার্সকে দেওয়া হয়। ছাত্রলীগের ওই অংশের বাধায় নির্ধারিত সময়ে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিতে পারেনি।’

একই অভিযোগ করেন নিহত ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর বড় বোন জুবাইদা সরওয়ার নিপা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি টিপুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি অংশ চবির প্রকৌশল দফতর অবরোধ করে রেখে জি কে বিল্ডার্সকে কাজ পাইয়ে দেয়। তাদের এই খারাপ কাজের প্রতিবাদ করায় তারা আমার ভাই দিয়াজকে হত্যা করে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’

অনুসন্ধান জাল কাগজপত্র দিয়ে জি কে বিল্ডার্সের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগ। তাদের দাবি, নিয়ম মেনে জি কে বিল্ডার্সকে কাজ দেওয়া হয়েছে।

জি কে বিল্ডার্স এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবু সাঈদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাগজপত্র যাছাই-বাছাই করে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেওয়া হয়েছে। দরপত্রের শিডিউলে দু’টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে জি কে বিল্ডার্স এগিয়ে ছিল। তাই তারা কাজটি পেয়েছে। তবে কাজে তাদের তেমন কোনও অগ্রগতি নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে আমরা বেশ কয়েকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। তারা গত তিন বছরে কাজ শেষ করতে পারেনি।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নতুন কলা অনুষদ ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ৭৫ কোটি টাকার কাজ এবং শেখ হাসিনা হলের দ্বিতীয় পর্যায়ের ২০ কোটি টাকার কাজের জন্য একই সময় দরপত্র আহ্বান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের ১৮-২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দরপত্রের শিডিউল বিক্রি করে প্রকৌশল অধিদফতর। আর এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দফতর অবরোধ করে রাখে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ফলে ছাত্রলীগের পছন্দের বাইরে কোনও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনতে পারেনি। পরে একই বছরের নভেম্বরে নতুন কলা অনুষদ ভবনের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। কার্যাদেশ পাওয়ার দুই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে কাজ শেষ করার কথা ছিল জি কে বিল্ডার্সের। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কাজ শেষ করতে পারেনি। গত তিন বছরে ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ করেছে জি কে বিল্ডার্স।

প্রসঙ্গত, অস্ত্র ও মাদক আইনের দুই মামলায় আটক জি কে বিল্ডার্সের মালিক জি কে শামীম বর্তমানে রিমান্ডে রয়েছেন।

চবির নির্মাণাধীন ভবন

দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের মালিক ফজলুল করিম স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জি কে বিল্ডার্সের সব নথিপত্র ঠিক ছিল। ওই প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রের সাপোর্ট নিয়ে কাজ আমরা করছি।’

কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবকাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজের মেয়াদ আছে। তার আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

দুদক সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই টেন্ডার কাজে ঠিকাদার কী কী অনিয়ম করেছেন সেগুলো অনুসন্ধান করে দেখিছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও গাফিলতি ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখিছি।’

জাল কাগজপত্র দিয়ে জি কে বিল্ডার্সের কাজ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা অনিয়মের কিছু তথ্য পেয়েছি। অনুসন্ধান শেষে বিস্তারিত জানাবো।’

সহযোগিতায় চবি প্রতিনিধি মিজানুর রহমান

আরও পড়ুন:

জি কে শামীম ছিলেন অঘোষিত ‘টেন্ডার কিং’

 

/এমএ/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে মরক্কোর নেপথ্য সহযোগিতা
‘পালানোর’ অভিযোগে ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
‘পালানোর’ অভিযোগে ডিআইজিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
জুলাই সনদ ঘোষণার আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
জুলাই সনদ ঘোষণার আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট