কক্সবাজারের রামু বৌদ্ধবিহারে হামলার ভয়াবহ দিন আজ (২৯ সেপ্টেম্বর)। ২০১২ সালের এই দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে গুজবের জের ধরে রামুর বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শহর খ্যাত রামুর ১২টি বৌদ্ধবিহার ও বসতি এ হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। তবে ঘটনার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও সাক্ষীদের সাক্ষ্যদানে অনীহায় ঘটনার বিচারকাজ থমকে আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে ভুক্তভোগী এবং সাক্ষীরা বলছেন মামলার দীর্ঘসূত্রিতার জন্য সাক্ষ্যদানে আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা।
তবে ঘটনার বিচার কার্যক্রম শেষ করে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়দের।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার একটি ছবি ট্যাগকে কেন্দ্র করে রামুতে সংঘটিত হয় ভয়াবহ এ ঘটনা। রাতের অন্ধকারে রামুতে ১২টি বৌদ্ধবিহার, ৩০টি বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে একইভাবে উখিয়া ও টেকনাফে আরও সাতটি বৌদ্ধবিহার ও ১১টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বিহার ও ঘরবাড়ি নতুন করে নির্মাণ করে দেওয়া হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নান্দনিকভাবে নির্মিত এসব বৌদ্ধ বিহার ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ঘটনায় ১৯ টি মামলা দায়ের হলেও একটি মামলা আপোষে নিষ্পত্তি হয়। এজাহারভুক্ত ৩৭৮ জনসহ অজ্ঞাত আরও ১৪-১৫শ জনকে অভিযুক্ত করে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮টি মামলায় ১০২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, ঘটনার ৯ বছরেও এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির আওতায় না আনায় সাম্প্রদায়িক শক্তি আবারও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে সব সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপদ থাকবেন।
রামুর কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক ভিক্ষু ও কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু জানান, ঘটনার ৯ বছর পার হয়ে গেছে। দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মামলার প্রথমদিকে যে গতি ছিল তাতে ভাটা পড়েছে। এতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেই সাক্ষী দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়েছেন। যে কারণে মামলার কার্যক্রম থমকে আছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও ভুক্তভোগী সাক্ষীদের মধ্যে সমন্বযের মাধ্যমে মামলার সুরাহা হবে বলে আশা করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ ধর্মীয় গুরু।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম জানান, ঘটনার পর ১৯টি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা করেন। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে অপর একটি মামলা করলেও পরবর্তীতে বিবাদীদের সঙ্গে আপোষনামায় বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়। বিচারাধীন ১৮টি মামলায় আদালতে সাক্ষী না আসায় বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। তবে সাক্ষীদের উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে সব মামলা নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারে গুজব ছড়িয়ে কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।