X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেই চেয়ারম্যানকে সতর্ক করলো জেলা প্রশাসন

চাঁদপুর প্রতিনিধি
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:১১আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬:১১

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়ায় লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেলিম খানকে সতর্ক করেছেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অঞ্জনা খান মজলিশ। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে সেলিম খানকে অব্যাহতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে দায়িত্বের সঙ্গে কথা বলার এবং কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে সেলিম খানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম খানের জবাবের আলোকে তাকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তাকে দায়িত্বের সঙ্গে কথা বলার ও কাজ করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করায় শোকজের জবাব দিয়েছেন চেয়ারম্যান সেলিম খান। তার বক্তব্য হলো, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ে যে প্রতিবেদন দিয়েছিলাম অর্থাৎ সব দলিল বিবেচনায় নিলে জমির দাম আসে ৫৫৩ কোটি টাকা। বাড়তি মূল্যের দলিলগুলো বাদ দিলে জমির দাম আসে ১৯৩ কোটি টাকা। এজন্য তিনি সাক্ষাৎকারে দুবার মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। চেয়ারম্যান বলেছেন, ওই বক্তব্য চেয়ারম্যান হিসেবে দেননি, ওই বক্তব্য ছিল জমির মালিক এবং রিট পিটিশনার হিসেবে। এছাড়া ওই টিভি চ্যানেল তার বক্তব্য আংশিকভাবে দেখিয়েছে, পুরো বক্তব্য দেয়নি। তাই কারণ দর্শানোর নোটিশ থেকে তিনি অব্যাহতি চান। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা তাকে সতর্ক করেছি।’

প্রসঙ্গত, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণের জন্য লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের মেঘনাপাড়ের একটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৬২ একর ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ইউপির চেয়ারম্যান সেলিম খান, তার ছেলেমেয়েসহ অন্যান্য জমির মালিকরা অস্বাভাবিক মূল্যে দলিল তৈরি করেছেন। ফলে ওই জমি অধিগ্রহণে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৩ কোটি টাকা। জমির অস্বাভাবিক মূল্য দেখে জেলা প্রশাসক তদন্ত করলে বেরিয়ে আসে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকা লোপাটের পরিকল্পনার তথ্য।

ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন, ওই মৌজায় জমির মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার কানুনগো ও সার্ভেয়ারদের সমন্বয়ে ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা যায়, অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত ও পূর্বে অধিগ্রহণকৃত দাগগুলোর জমির হস্তান্তর মূল্য অস্বাভাবিক।

এছাড়া এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হওয়ায় জনস্বার্থ ও সরকারি অর্থ সাশ্রয়ে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যে সৃজন করা দলিল ছাড়া ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর মৌজার অন্যান্য সাফকবলা দলিল বিবেচনায় নিয়ে ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা অধিগ্রহণের প্রাক্কলন প্রস্তুত করা হয়। উচ্চমূল্যের সেই দলিলগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রাক্কলন তৈরি করলে সরকারের ৩৫৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা ক্ষতি হতো। এছাড়া মৌজা মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে সাধারণ জনগণ ভূমি হস্তান্তরসহ নানা বিষয়ে সমস্যায় পড়তো।

এদিকে, সরকারি অর্থ সাশ্রয়ের পক্ষে অবস্থান নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ একটি অংশ। সরকারি অর্থ লোপাট চেষ্টার পরিকল্পনা ফাঁস হওয়ার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে চাঁদপুর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য উপস্থাপন করায় চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গত ১০ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন।

ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কেবলমাত্র একবার প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে। ওই প্রাক্কলনের বিরুদ্ধে আপনি হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেছেন। অথচ টিভি চ্যানেলে দেওয়া বক্তব্যে আপনি বলেছেন, ‘আমরা কোনও রেট (মূল্য) দিই না, আগের রেটটাও ডিসি সাহেব করেছেন; পরেরটাও ডিসি সাহেব করেছেন।’

নোটিশে আরও বলা হয়, অধিগ্রহণ প্রস্তাবিত এলাকায় ভূমির মালিক ও রিট পিটিশনার হিসেবে জেলা প্রশাসক কর্তৃক একবার প্রাক্কলন তৈরি করা হয়েছে জেনেও আপনি টিভি চ্যানেলে আগের রেট, পরের রেট অর্থাৎ দুই রেট উল্লেখ করেছেন। যা অসত্য ও বিভ্রান্তিমূলক। এতে সরকারি কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা নোটিশ পাওয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে জানাতে হবে। তা না হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।

/এএম/
সম্পর্কিত
কার্যালয়ের সামনে ইট দিয়ে ডিসির গাড়ি ভাঙলেন যুবক
বান্দরবানের রুমা ভ্রমণে প্রশাসনের ‘না’
ক্রয় রসিদ দেখাতে না পারায় ব্যবসায়ীকে লাখ টাকা জরিমানা
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা