X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিযানের খবর শুনে পালিয়েছেন বালু উত্তোলনকারীরা

ইব্রাহীম রনি, চাঁদপুর
২২ মার্চ ২০২২, ২২:৩৮আপডেট : ২২ মার্চ ২০২২, ২২:৩৮

চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত নৌযানগুলো জব্দ ও ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছেন বালু উত্তোলনকারীরা। একই সঙ্গে নদীর সীমানা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন ড্রেজার ও বাল্কহেড। 

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকাল থেকে পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছেন অনেক ব্যবসায়ী। এর আগে সোমবার (২১ মার্চ) পদ্মা-মেঘনায় গত কয়েক বছর ধরে বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত নৌযানগুলো জব্দের নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। একই সঙ্গে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

তবে নদী রক্ষা কমিশনের অফিসিয়াল নির্দেশনা না পাওয়ায় বালু উত্তোলনকারীদের গ্রেফতারে অভিযান চালাতে পারছে না পুলিশ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ড্রেজার, বাল্কহেড নিয়ে বালু উত্তোলনকারীদের পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ তারা এখন পালিয়ে গেলেও পরিস্থিতি বুঝে আবারও যত্রতত্র বালু উত্তোলন শুরু করবে।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরেই পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্র। তবে সোমবার নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনার খবর পাওয়ার পর রাত থেকেই অনেক ড্রেজার ও বাল্কহেড সরিয়ে ফেলেছেন বালু উত্তোলনকারীরা। তবে এখনও কিছু স্থানে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে কেউ কেউ।

আরও পড়ুন: পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনে জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পদ্মা-মেঘনায় বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার খবর শুনেছি। তবে এখনও অফিসিয়াল নির্দেশনা না আসায় অভিযান চালাতে পারছি না। আমরা নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। অফিসিয়ালি নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু করবো।

বালু উত্তোলনকারীরা নৌযান নিয়ে পালিয়ে গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা অপরাধী তারা তো অ্যাকশনের খবর পেলে পালাবেই। জাটকা রক্ষা অভিযান সফলে আমরা এখনও নদীতে আছি। আগে যে পরিমাণ ড্রেজার এই অঞ্চলে দেখেছি, আজ অনেক কম দেখা যাচ্ছে। নদীতে আগে ড্রেজার আর বাল্কহেডে ব্যস্ততম শহরের মতো থাকতো। এখন তার ১০ ভাগের এক ভাগও নেই।

নদীর সীমানা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন ড্রেজার ও বাল্কহেড

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনা আমাদের মানতে হবে। সেখান থেকে নির্দেশনা আসার পর আমাদের প্রস্তুতির একটা বিষয় থাকে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই প্রশাসন অভিযান শুরু করবে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমরা নদী রক্ষা কমিশনের লিখিত নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। নির্দেশনা এলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, সোমবার মিটিং হয়েছে। সেই মিটিংয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে অফিসিয়ালি তাদের চিঠি দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, নদীর গার্ডিয়ান হিসেবে নদী রক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ দেখতেই হবে। ইলিশ যদি একবার দিক পরিবর্তন করে ফেলে তাহলে ইলিশ থেকে বঞ্চিত হবো। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা এই ধরনের অবৈধ কাজ করতে সহযোগিতা করে তারা জাতির শত্রু। অবিলম্বে নদী থেকে তাদের বিতাড়িত করতে হবে। পুলিশ, নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সবার সহযোগিতায় বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও নৌযানগুলো জব্দ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। 

নদীভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী ওই চক্রটি। এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙন কবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ ও ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদী রক্ষা কমিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। 

ওই চিঠির পর গতকাল সোমবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ইতোমধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।

/এএম/
সম্পর্কিত
পদ্মায় গোসল করতে নেমে ৩ কিশোরের মৃত্যু
তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের তিন দিনের রোডমার্চ
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নৌকাডুবিতে নিহত ৪
সর্বশেষ খবর
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ