X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘চার মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, আর উগ্র আচরণ করবো না’

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
০৩ জুন ২০২২, ২২:৩৪আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ২২:৩৪

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে সাত দিন নিখোঁজের পর উদ্ধার চার বোন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমাতে চায়। বাবা-মাও চান আদর-যত্ন পেয়ে মেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হোক। মেয়েদের আর হারাতে চান না বাবা মুজিবুল হক ও মা মাসুদা আক্তার। 

বাবার সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বুধবার (০২ মে) রাতে তাদের উদ্ধার করে পিবিআই। উদ্ধারের পর শুক্রবার (৩ মে) সকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে তারা বাড়ি ফিরে। সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা জানায় বাড়ি ফেরা চার বোন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয় থেকে দুপুর ১২টায় মামার বাড়ি নাঙ্গলকোটের নারুয়া গ্রামে তাদের নিয়ে যান মামা সিদ্দিকুর রহমান ও বাবা-মা। সেখানে তাদের দেখতে আসেন মামার বাড়ির প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা। মামার বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নেয় চার বোন। রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরে তারা।

আরও পড়ুন: ‘মা-বাবার কলহের জেরে বাড়ি ছাড়ে চার বোন’

গত ২৬ মে সকালে চার বোন তাসনিম জাহান (১৭), মারজাহান (১৪), তাজিন সুলতানা (১২) ও মাইশা সুলতানা (৬) বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তাদের সন্ধান না পেয়ে ২৮ মে নাঙ্গলকোট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মুজিবুল হক। তাদের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মৌকরা ইউনিয়নের কালেম গ্রামে।

মারজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, ‘আগে বেশিরভাগ সময় মাইশা মায়ের সঙ্গে ঘুমাতো। আমরা বড় তিন বোন একসঙ্গে ঘুমাতাম। আজ থেকে চার বোন বাবা-মায়ের সঙ্গে ঘুমাবো। আমরা এখন ভালো আছি। বাবা-মা অনেক আদর করেছেন। আমাদের জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করেছেন। এই কয়েকদিন আমরাও কান্না করেছি। বেশি কান্না করেছে মাইশা। আমরা আর কখনও এমন করবো না।’

তাসনিম জাহান জানায়, ‘আমার বাবা ছোটখাটো বিষয়ে আমাদের অনেক বেশি বকাঝকা করতেন। অনেক বছর বাবা বিদেশে ছিলেন। আট-দশ বছর আগে তিনি দেশে আসেন। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। তখন থেকেই দেখে আসছি তিনি আমাদের ও মায়ের সঙ্গে রাগ করে কথা বলেন। তিনি আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেন, তা ঠিক নয়। এটি বোঝানোর জন্যই আমরা বড় দুই বোন; ছোট দুই বোনকে নিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। এখন বাবা বলেছেন আর এমন করবেন না। আমরাও আর কোথাও যাবো না। আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে গত কয়েকদিন।’

আরও পড়ুন: সাত দিনেও ফেরেনি ৪ বোন, অপহরণের শঙ্কা অভিভাবকদের

মামা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পিবিআই কার্যালয় থেকে আসার পর তারা কারও সঙ্গে তেমন কথাবার্তা বলেনি। তবে সন্ধ্যায় আমরা একসঙ্গে নাশতা করেছি। চেষ্টা করছি তাদের স্বাভাবিক করতে। সাত দিন তাদের ওপর দিয়ে একটা ধকল গেছে। স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। তবে আমাদের আর চিন্তা নেই। তাদের বাবা পিবিআই কার্যালয়ে এবং পরে বাড়ি এসে বলেছেন, মেয়েদের সঙ্গে উগ্র আচরণ আর করবেন না।’

তিনি বলেন, ‘রাতের খাবার খেয়ে তারা নিজেদের বাড়ি গেছে। গত সাত দিন তাদের চুলায় আগুন জ্বলেনি। প্রতিবেশীরা তাদের বাবা-মাকে শুকনো খাবার খাইয়েছেন। তাদের হারিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন বাবা-মা।’

বাবা মুজিবুল হক বলেন, ‘আমি অনেক বছর দুবাই ছিলাম। এখন বয়স ও অসুস্থতার কারণে কোনও কাজ করতে পারি না। তখন টাকা-পয়সা থাকলেও এখন হাত খালি। কিছুদিন আগে ব্যবসায় লোকসান দিয়েছি। চার মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। বাড়িতে সারাক্ষণ শুয়েবসে থাকি। মাঝেমধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বকাঝকা করতাম। সেদিন আমার রাগ একটু বেশি ছিল। তাই দু’চারটা কথা বলেছি। কিন্তু ওসব কথার কারণে অভিমান করে মেয়েরা বাড়ি থেকে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। আমি পুলিশকেও বলেছি, আর মেয়েদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করবো না।’

মা মাসুদা আক্তার বলেন, ‘এক সপ্তাহ মুখে খাবার ওঠেনি। চিন্তায় আমি মরে যাচ্ছিলাম। মেয়েগুলো ছোট। তাদের সামনে এভাবে আমাদের ঝগড়া করা উচিত হয়নি। আমরা এখন থেকে সতর্ক থাকবো।’

উদ্ধার হওয়া বাড়ির মালিক হালিমা বেগম বলেন, ‘মেয়েগুলোকে পাওয়ার পর থেকে আমি মনে মনে খুঁজছিলাম কোনও হারানোর খবর। কিন্তু খবর পাইনি। তাদের বাইরে যেতে দিইনি, যদি কোনও ক্ষতি হয়ে যায় এই ভয়ে। আমি তাদের বারবার জিজ্ঞাসা করেছি মা-বাবার কথা। পরিবারের মোবাইল নম্বর চেয়েছি, কিন্তু তারা দেয়নি। বুধবার কান্না করতে করতে এসে তাসনিম বলে, আমাদের কাছে বাবার মোবাইল নম্বর আছে, কল দিতে। তারপর আমি কল দিই। তখন তাদের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়। এরপর মেয়েদের নিতে তাদের আসতে বলি।’

আরও পড়ুন: ৭ দিন পর নিখোঁজ চার বোনের সন্ধান

গত ২৬ মে নিখোঁজ হয় চার বোন। তারা স্থানীয় দুটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। কোথাও সন্ধান না পেয়ে ২৭ মে রাতে নাঙ্গলকোট থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তাদের বাবা। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বুধবার তাদের উদ্ধার করে পিবিআই।

শুক্রবার সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের পরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম জানান, কুমিল্লা নগরীর জাঙ্গালিয়া এলাকা থেকে উদ্ধারের পর চার বোনকে সকালে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা পিবিআইকে জানিয়েছে, তাদের বাবা বদমেজাজি। মা-বাবা প্রায়ই ঝগড়া করতো। সেদিন সকালেও ঝগড়া করেছিল। এ সময় তাদের বাবা রাগ করে মেয়েদের বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। পরে বিকালে নানি এসে তাদের নিয়ে যান। 

তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নানির বাড়ি নারুয়া গ্রাম থেকে তারা ফতেহপুর এলাকা হয়ে কুমিল্লা সুপার বাসে উঠে জাঙ্গালিয়া এলাকায় যায়। সেখানে অপরিচিত অটোরিকশাচালকের মাধ্যমে হালিমা বেগম নামে একজনের এক কক্ষের বাসা ভাড়া নেয়। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় হালিমার সন্দেহ হয়। কিন্তু তাদের নিখোঁজের বিষয়ে কোনও খবর পাননি তিনি। মেয়েদের কাছে থাকা টাকায় সেখানে খাবার খায় এবং চলাফেরা করে। বৃহস্পতিবার তাদের পরিবারের মাধ্যমে উদ্ধার করে পিবিআই।

/এএম/
সম্পর্কিত
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জিম্মিদশার দুর্বিষহ দিনগুলোর কথা জানালেন এমভি আবদুল্লাহর নাবিক
রাজশাহীতে পদ্মা নদী থেকে ৩ জনের লাশ উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
ইমরান খান ও বুশরা বিবিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কথা না বলতে আদালতের নির্দেশ
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
বিতর্কিত আউটের ছবি পোস্ট করে মুশফিক লিখলেন...
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী