X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

চট্টগ্রামে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু, দুই সপ্তাহে ৫ মৃত্যু 

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০২ অক্টোবর ২০২২, ১৭:০৪আপডেট : ০২ অক্টোবর ২০২২, ২০:১৭

চট্টগ্রাম জুড়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। মশাবাহিত এই রোগটি বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ জন করে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। গত দুই সপ্তাহে এই রোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন পাঁচ জন। গত সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে পাঁচশ’র বেশি রোগী ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় নগরীর বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, গত যে কোনও সময়ের তুলনায় চট্টগ্রামে এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেড়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কার্যকর কোনও উদ্যোগ নেয়নি। যে কারণে ডেঙ্গু এখন নগরবাসীর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক ডেঙ্গু রোগীর শারীরিক অবস্থা অনেকটাই জটিল। আক্রান্ত রোগীর দাঁতের মাড়ি ও চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কমে যাচ্ছে রক্তচাপ এবং প্লাটিলেট (অনুচক্রিকা)। চট্টগ্রাম জুড়ে মশাবাহিত এই রোগ আতঙ্কের পাশাপাশি মৃত্যুর কারণ হলেও পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটাচ্ছে না সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, ‘চট্টগ্রামে রবিবার ২৭ জনসহ গত দুই দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৬২ জন হাসপাতাল চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৩৬ জন নগরীর এবং ২০ জন জেলার এবং ছয় জন অন্য জেলার বাসিন্দা।’  

চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. নুরুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে ৯ জন শিশুসহ ৩৭ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’ দৈনিক ৮ থেকে ৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশন ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্তমানে এ হাসপাতালে ২৭ জন রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। প্রতিদিন ৭-৮ জন করে নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে এখন আক্রান্ত যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন তাদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত জটিল। আগে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তক্ষরণ হয়নি। গত এক সপ্তাহ ধরে যেসব রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন তাদের অনেকের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেক রোগীর প্লাটিলেট (অনুচক্রিকা) কমে যাচ্ছে। একইভাবে অনেক রোগীর রক্তচাপও কম পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে এসব রোগীদের বেশি দিন চিকিৎসা দিয়ে রোগ সারাতে হচ্ছে। জ্বর কমার পরও তিন দিন রোগীদের পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে। তারপর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।

তবে অবস্থা জটিল আকার ধারণের পেছনে সিটি করপোরেশনের গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও সংস্থাটির কর্মকর্তারা আবহাওয়া ও বৃষ্টির ওপর দায় চাপাচ্ছেন। তারা বলছেন, এবার আবহাওয়াজনিত কারণে ডেঙ্গু বেড়েছে। এক দিন বৃষ্টি হলে সাত দিন বৃষ্টি হচ্ছে না। আবার অসময়ে বৃষ্টি হচ্ছে। যদি লাগাতার কয়েকদিন কিংবা আরও বেশি বৃষ্টি হলে মশার বংশবিস্তার এভাবে হতো না বলে মনে করছেন চসিক কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে মশক নিধন কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। নুরুল ইসলাম নামে নগরীর মুরাদপুর এলাকার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘নগরীর অলি-গলিতে মশার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। স্প্রেম্যানদেরও এখন আর এলাকায় দেখা যায় না। মশার যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। দিন-রাত মশার কয়েল জ্বালিয়েও পরিত্রাণ মিলছে না।’

তিনি অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন পর্যাপ্ত ওষুধ না ছিটানোর কারণে মশা বাড়ছে। বাড়ছে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত অন্য রোগ। অথচ চকিস সেবা না দিলেও ভবন করসহ নানা কর বাড়িয়েছে ঠিকই।  

এদিকে, দৈনিক যুগান্তর চট্টগ্রাম অফিসের স্টাফ রিপোর্টার এম এ কাউসার রবিবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার বড় ভাই নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান (৪৬) পাঁচদিন ধরে অসুস্থ। শনিবার পরীক্ষায় তার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তার রক্তে প্লাটিলেট ১০ হাজারে নেমে এসেছে। রাত ১২টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।’  

সাংবাদিক এম এ কাউসার অভিযোগ করেন, ‘এলাকায় এখন আর স্প্রে করা হয় না। কয়েল জ্বালিয়েও মশা থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত সব ধরনের রোগই বেড়েছে।’

সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা আবুল হাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নগরজুড়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এ কারণে আমরাও উদ্বিগ্ন। নগরবাসীকে ডেঙ্গু থেকে রক্ষায় সচেতন করার পাশাপাশি রোগের বাহক এডিস মশা নিধনের কাজ চলছে। নগরীর প্রতিটি হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ এবং নগরীর অলি-গলিতে ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম চলছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ওষুধ দেওয়ার জন্য ২০০ জন স্প্রেম্যান কাজ করছেন। ওষুধ ছিটানোর জন্য ফগার মেশিন আছে ৬০টি এবং স্প্রে আছে ১৫০টি।’

মশা নিধনে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত আছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে দুই ধরনের মশার ওষুধ মজুত আছে। এরমধ্যে লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী) এবং এডালটিসাইড (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) ওষুধের পর্যাপ্ত মজুত আছে। মশা নিধনে সিটি করপোরেশন আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেও দাবি করেন তিনি। 

/টিটি/
সম্পর্কিত
ডেঙ্গু পরীক্ষার নির্ধারিত ফি নেওয়ার মেয়াদ বাড়ালো স্বাস্থ্য অধিদফতর
একদিনে বছরের সর্বাধিক ডেঙ্গু রোগী
বরগুনায় ডেঙ্গু আরও একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৭৭ জন
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (১ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (১ জুলাই, ২০২৫)
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে
বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরে
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
দুর্ঘটনায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৪২২ শ্রমিক
৪০ শতাংশ কৃষক পান না ন্যায্য মজুরি: জরিপ
৪০ শতাংশ কৃষক পান না ন্যায্য মজুরি: জরিপ
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস উপদেষ্টা আসিফ ও সাংবাদিক জুলকারনাইনের
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে