X
শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

মরিচের কেজি ২৮ লাখ টাকা, কীভাবে এলো বাংলাদেশে?

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০১আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:০১

মরিচের কেজি ২৮ লাখ টাকা। ডলারের হিসেবে ২৬ হাজার মার্কিন ডলার। যা দিয়ে ২৮ ভরি সোনা কেনা সম্ভব। এই মরিচ এখন কুমিল্লার এক কৃষি উদ্যোক্তার ঘরের সামনের উঠানে চাষ হয়েছে। বলছিলাম, পেরুতে জন্ম নেওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মরিচ ‘চারাপিতার’ কথা।

কুমিল্লার ঠাকুরপাড়ার বাগানবাড়ি এলাকায় শখের বশে এই মরিচের গাছ লাগিয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা আহমেদ জামিল সেলিম। ছয় বছরের চেষ্টায় লাগানো গাছে এখন মরিচ ধরেছে। নিজের ঘরের সামনে লাগানো তিনটি গাছে শ’খানেক মরিচ ঝুলে আছে।

মরিচ দেখতে কেমন?

কৃষি উদ্যোক্তা আহমেদ জামিল সেলিমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মরিচের আকৃতি গোলাকার। কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের। পাকলে হলুদ। গাছের সাইজ আড়াই থেকে তিন ফুট লম্বা। সাদা ফুল থেকে পরাগায়ন হয়ে মরিচের জন্ম হয়। কাঁচা অবস্থায় স্বাদ বা গন্ধ তেমন পাওয়া যায় না। পেকে হলুদ হলে স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যায়। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুতে আবাদ হওয়া এই জাতের মরিচে ঝাল কম। এটি সুগন্ধিজাতীয় ঝাল।

যেভাবে বাংলাদেশে এলো চারাপিতা

আহমেদ জামিল জানান, প্রথমে সৌদি আরবের একটি হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে এই মরিচের ছবি দেখেন। পরে জানতে পারেন, এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি মরিচ। ওই হোটেলের রান্নায় এই মরিচ ব্যবহার করা হয়। প্রবল আগ্রহে গুগলে খুঁজে দেখেন পেরুতে চাষ হয়। এ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও হয় না। পেরু থেকেই সংগ্রহ করেন এই মরিচ। প্রথমে দেশের মাটিতে ২০১৭ সালে চারা লাগিয়ে ব্যর্থ হন। পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বীজ পাঠান। সেখানে কয়েকটি চারা হয়। সেই গাছে বীজ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আবার বীজ আনেন দেশে। ওই বীজ লাগান কুমিল্লার বাড়িতে। ৫০টি বীজ থেকে ছয়টি চারা গজায়। এর মধ্যে পরীক্ষা করতে গিয়ে মারা যায় একটি। ঢাকায় নেন দুটি এবং তিনটি রাখেন কুমিল্লায়। ঢাকা নেওয়া দুটিতে এখনও মরিচ আসেনি। আবহাওয়ার সুবিধায় কুমিল্লার বাসায় থাকা চারাগুলোতে ফলন এসেছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশে প্রথম

আহমেদ জামিল বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, আমার ধারণা আমেরিকাতেও আমার হাত ধরে প্রথম চারাপাতির চাষ হয়েছে। কারণ এটি সব মাটিতে সহজে চাষ করা যায় না। ছয় বছরের চেষ্টায় পেরুর বাইরে বাংলাদেশ ও আমেরিকাতেই চাষ হয়েছে। সম্ভবত আমিই প্রথম বীজ লাগাই। চার মাস আগে বস্তার ভেতর মাটি ভরে বীজ রোপণ করি। একেকটি গাছ বুকসমান। তিন বছর পর্যন্ত গাছ থেকে ফলন পাওয়া যাবে।’

যে কারণে দাম এত বেশি

জামিল দাবি করেন, চারাপিতা মরিচ পৃথিবীর সবচেয়ে দামি। এক কেজি মরিচের দাম ২৬ হাজার ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ২৮ লাখের সমান। অত্যন্ত সুগন্ধি এই মরিচ ধনী ব্যক্তিরা ব্যবহার করেন। আরব দেশের রাজা-বাদশাহ তাদের খাবারের সঙ্গে খান। মক্কার অনেক দামি হোটেলেও এর ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলেন, ‘এই মরিচের গাছ দুর্লভ। বৃষ্টির পানি পড়তে পারে না। কিন্তু রোদ লাগাতে হয়। সচরাচর বীজ দেশে পাওয়া যায় না। বৃষ্টির পানি পড়ে আমার একটি গাছ মারা গেছে। বাণিজ্যিক চাষও তেমন হয় না, তবে পেরুতে চাষ হয়। এটি মসলাজাতীয় মরিচ। তেমন ঝাল নেই। দুর্লভ ও ভিন্ন স্বাদের কারণে দাম বেশি।’

মরিচটির মূল নাম আজি চারাপিতা

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শামসিল আরেফিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মরিচটির মূল নাম আজি চারাপিতা। এটির বৈজ্ঞানিক নাম Capsicum chinese। এই মরিচ Solanaceae পরিবার ভুক্ত। এর আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর আমাজন রেইন ফরেস্টে।’

মরিচটির মূল নাম আজি চারাপিতা

শামসিল আরেফিন বলেন, ‘এক কেজি মরিচ গুঁড়ার দাম ২৫ হাজার ডলার। এক কেজি মরিচ গুঁড়া তৈরিতে প্রয়োজন পড়ে ২০ হাজার ফল। এর ফলন গোলাকার পডজাতীয়। ৫ থেকে ৮ মিলিমিটার ব্যাস। কচি অবস্থায় সবুজ ও পাকলে হলুদ হয়। সুগন্ধিযুক্ত, ঝালবিহীন ও সুস্বাদু। এটি সস, সালাদ ও স্যুপে ব্যবহৃত অভিজাত খাবার। একটি গাছে মৌসুমে সর্বোচ্চ ১০০টি ফল ধরে। এক কেজি মরিচ গুঁড়া তৈরি করতে ২০ হাজার মরিচ প্রয়োজন। এই উদ্ভিদ ট্রপিক্যাল জোনে হয়। মরিচে ভিটামিন এ, বি, সি,  আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাসিয়াম, রিবোফ্লাভিন ও সুগন্ধি আছে। এটি রাজা-বাদশারা ব্যবহার করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে এটির বীজের মাধ্যমে চাষাবাদ করা যেতে পারে। তবে প্রথমে ট্রায়াল বেসিসে করলে ভালো। চাষ হলে এটি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’

যা বলছেন কৃষি কর্মকর্তা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই মরিচ সম্পর্কে শুনেছি। আমি এর আগেও জামিল সাহেবের বাসায় গিয়েছি। তিনি নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। এই মরিচ সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি, এটি বাংলাদেশে প্রথম। তবে এর দাম সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। যদি ২৮ লাখ টাকা কেজির মরিচ হয় তাহলে এটি দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। আমরা গবেষণা করে যদি তা চাষের উপযুক্ত মনে করি, তাহলে কৃষকের কাছে পৌঁছানোর সব ব্যবস্থা করবো। তাছাড়া এই উদ্যোক্তা যদি এই মসলা চাষে সহযোগিতা চান, তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

/এসএন/
সম্পর্কিত
হিমাগারে আলু সংরক্ষণের মূল্য নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান, ভাড়া নির্ধারণ
হিমাগার ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে আলুচাষি-ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
জাগ দেওয়ার পানির সংকটে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক
সর্বশেষ খবর
হামজাদের কোচ বরখাস্ত
হামজাদের কোচ বরখাস্ত
জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন দুটি জাহাজ, দরপত্র আহ্বান
বিএসসির বহরে যুক্ত হচ্ছে নতুন দুটি জাহাজ, দরপত্র আহ্বান
জোহরান মামদানি কি একজন কমিউনিস্ট?
জোহরান মামদানি কি একজন কমিউনিস্ট?
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
পরীক্ষায় বাড়তি সময় না দেওয়ায় পরিদর্শককে মারধর ছাত্রদল নেতার, দিলেন হত্যার হুমকি
জাতীয়করণ নয়, এমপিওভুক্তির আওতায় আসছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা
জাতীয়করণ নয়, এমপিওভুক্তির আওতায় আসছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা
ইরান-রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছে চীন
ইরান-রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করেছে চীন
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য নতুন এমপিও নীতিমালা জারি
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য নতুন এমপিও নীতিমালা জারি