চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে বিএনপি ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে কিশোর জাহেদ হাসান রুমন (১৫) নিহতের ঘটনায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বাড়িতে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
তবে এই কিশোরকে ছাত্রলীগ নিজেদের কর্মী বলে দাবি করলেও পরিবার বলছে ভিন্ন কথা। নিহত জাহেদের মামা ইউনুস নূরী বলেন, ‘আমার ভাগিনা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তিন ভাইয়ের মধ্যে মেজ ছিল। বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও তারা তিন ভাই উপজেলার আজমপুর এলাকায় নানার বাড়িতে থাকতো। সে আজমপুর বাজারে দিনে একটি চায়ের দোকানে ও রাতে মাছের ট্রাকের ড্রামে পানি ভরার করার কাজ করতো। দুই দলের মারামারির বলি হয়েছে ছেলেটা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি-ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় রুমন যে দোকানে কাজ করতো সেখানে ছাত্রলীগের এক কর্মী ডুকে যায়। পরে বিএনপি নেতারা দোকানে ঢুকে তাকে মারতে গেলে ওই ছাত্রলীগকর্মীর সঙ্গে রুমনও দৌড় দেয়। এ সময় বিএনপি নেতাদের লাঠির আঘাতে তার মাথার পেছনে আঘাত লাগে। একপর্যায়ে পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এরপর তাকে আমরা পুকুর থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
এদিকে, দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত কিশোর জাহেদ হাসান রুমনকে ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী দাবি করে শোক বার্তা দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগ। শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে নিহতের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় রাত ১১টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।
এর আগে, শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে স্থানীয় আজমপুর বাজারে অবস্থান করেন। এ সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন কর্মী তাদের পথরোধ করে দাঁড়ান। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এই হামলায় নিহত হন জাহেদ। এ ছাড়া আহত হন বিএনপি, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের আরও ২০ নেতাকর্মী।
হামলার ঘটনায় যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে আহতরা হলেন- ওচমানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হাসান (২৮), মিজানুর রহমান (৩২), ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শহীদ খান দুখু (৩৫), আব্দুল্লাহ্ আল মামুন (২৮), মাহেদুল আলম রাকিব (২৫)। আহতদের মধ্যে মোহাম্মদ হাসানের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছেন- হানিফ, জিয়াউদ্দিন জিয়া, সালাউদ্দিন বাবু, নুর হোসেন বাদশা, মিঠু, আরিফ মাইনুদ্দিন, রানা, মোজাম্মেল হোসেন, মাসুদ কালা, মোহাম্মদ তারেক, রাজু, রাকিব হোসেন, মোহাম্মদ নাসির সাইফুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, জিলানী মিঝি, জামশেদ আলম।
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (মাস্তান নগর হাসপাতাল) কর্তব্যরত চিকিৎসক খন্দকার নোমান সায়েরী জানান, আজমপুরের ঘটনায় আহত মোট পাঁচ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর মধ্যে মোহাম্মদ হাসানের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাথায় আঘাতজনিত কারণে রুমনের মৃত্যু হয়।
উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মাসুদ করিম রানা দাবি করেন, বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগকর্মী জাহেদকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। জাহেদ আজমপুর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য বলে দলীয় প্যাডে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শোকবার্তা জানানো হয়েছে।
মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া দাবি করেন, বিএনপি নেতা নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলায় আমাদের ছাত্রলীগের এক কর্মী নিহত হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছে আরও পাঁচ জন। তারা এ সময় আজমপুর বাজারে অবস্থিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়েও হামলা চালায়।
মীরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শাহিনুল ইসলাম স্বপন দাবি করেন, আগামী ৫ অক্টোবর তারিখের কর্মসূচির প্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভার আয়োজন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন।
তার দাবি, বিএনপির ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরাও ছাত্রলীগের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। হামলার পর রাতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বাড়িতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মীরসরাই সার্কেল) মনিরুল ইসলাম জানান, আজমপুর বাজারে সংঘর্ষের ঘটনায় জাহেদ হাসান রুমন নামের একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৫-৬ জন। ঘটনার পরপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ জনকে থানায় আনা হয়েছে। এ ঘটনায় রাত ১১টা পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি।