লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে মাদক বহনের কাজ ছেড়ে দেওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীর অব্যাহত হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অসহায় নিরীহ মো. আজাদ হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। তিনি রায়পুরের চরমোহনা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর রায়পুর গ্রামের মৃত ফারুখ হোসেনের ছেলে।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী আজাদ লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর পৃথক পৃথকভাবে ৩টি অভিযোগ সরাসরি ও ডাকযোগে প্রেরণ করেছেন।
আজাদ জানান, তার পাশের রায়পুর ইউনিয়নের চালতাতুলি গ্রামের সিরাজ কসাইয়ের ছেলে বাবু কসাই কয়েক বছর যাবৎ গরু বিক্রি ও কসাইয়ের কাজের আড়ালে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পরিবহনযোগে মাদক সরবরাহ করে থাকে।
অভিযুক্ত কসাই বাবুর নামে রায়পুর থানা, জেলা গোয়েন্দা কার্যালয়সহ ইউপি কার্যালয়ে মাদকসহ নারী নির্যাতনের মামলা ও একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি তার। এলাকায় গাঁজা ও ইয়াবা ব্যবসা চালালেও অজ্ঞাত কারণে সে ধরা পড়ছে না। এমনকি মাদক আছে এমন তথ্য দিলেও কেউ তাকে ধরতে যায় না বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
আজাদ হোসেন স্বীকার করে বলেন, ‘আমি নিজে বাবুর মাদক বহনকারী ছিলাম। গত ৩ বছর আগে আমার বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। আমার জামাই একজন দিনমজুর। মেয়ের জামাইয়ের একপ্রকার চাপে পড়ে গত ৩ বছর যাবৎ আমি মাদক বহন কাজ ছেড়ে এলাকায় খামার দিয়ে হাটে গরু-ছাগলের ব্যবসা করছি। এ ছাড়াও নিজ বাড়িতে বাচ্চা গরু, ছাগল, কবুতর, হাঁস পালন করে হাটে বিক্রি করি। একটি মুদি দোকানও দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীর অপকর্ম থেকে সরে আসার কথা বলায় বাবু আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিলে এক মাস কারাভোগ করে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) জামিনে বের হই। বাড়িতে এসে দেখি দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় আমার খামারের টিন কেটে তালাবদ্ধ রেখেছে বাবু। এ ছাড়াও প্রায়ই প্রশাসন দিয়ে হয়রানি করছে। ৪ বছরে ৫টি মাদক মামলায় ফাঁসিয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ডিবি পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যদের আমার বাড়িতে পাঠায় বাবু। প্রশাসন ভুল বুঝে আমার স্ত্রী-কন্যাদের ধমক দেয় এবং আটকের ভয় দেখায়। এ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে রাতের আঁধারে মাদক রেখে প্রশাসন দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেয়।’
হতাশা তাকে গ্রাস করে ফেলেছে জানিয়ে আজাদ বলেন, ‘বাবুর সার্বিক কর্মকাণ্ডে আমার জীবনে হতাশা নেমে এসেছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় মৃত্যুই মুক্তির একমাত্র পথ। আমার অসুস্থ মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানের মুখের আহার জোগানোর মতো আমি ছাড়া দ্বিতীয় অবলম্বন নেই। তাদের কথা ভেবেই আমাকে বেঁচে থাকতে হচ্ছে।’
স্বাভাবিক ফিরে আসতে চান উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানতে পেরেছি রাজশাহী পুলিশের অনন্য উদ্যোগে নেতিবাচক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করছে বিভিন্ন সময় অভিযুক্ত ও জামিনপ্রাপ্ত জঙ্গিরা। সেই সংবাদটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমিও তাদের মতো বউ-বাচ্চাদের নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছি।’ যেকোনও শর্তে নিজের পরিবার নিয়ে বাঁচতে চান আজাদ।
মাদক ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী (রায়পুর ও রামগঞ্জ) বলেন, ‘এটি পুলিশ বাহিনীর প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম। যে অপরাধী ভালো হতে চায়, আমরা তাদের সুযোগ দিই।’
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে কসাই বাবুর ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি কোনও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না। আমি খামারের মালিকের কাছে ৪ লাখ টাকা পাই। তা ছাড়া আজাদ খামারের পাহারাদার। তার কাছেও অনেক টাকা পাই। আজাদ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছে। আমিও তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরবো।’