ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের কালিসীমা গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সদর থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানসহ মোট ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, এলাকায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আরজু মিয়ার অনুসারী ও একই ইউনিয়নের বাসিন্দা ও জেলা পরিষদের সদস্য মো. বাবুল মিয়ার অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর মধ্যে মেম্বার আরজু মিয়া ও তার অনুসারী বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আলম, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন। অপরদিকে জেলা পরিষদের সদস্য বাবুল মিয়ার গ্রুপে রয়েছেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবদুল কাইয়ূমসহ তার অনুসারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিন আগে আরজু মিয়া গ্রুপের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক শওকতের ছেলে মিল্লাতকে মারধর করে বাবুল মিয়ার অনুসারীরা। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে গ্রাম্য সালিশে মীমাংসা করা করা হয়। গত রবিবার রাতে আবারও বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক শওকত এবং তার ছেলে মিল্লাতকে মারধর করেন বাবুলের অনুসারীরা। এ ঘটনায় গ্রামে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি মীমাংসার জন্য সোমবার সকালে উভয় পক্ষকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় ডাকা হয়।
এর মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে দাঙ্গাবাজরা ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশত বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ, এক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস এবং ৩৭ রাউন্ড শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এদিকে, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা করেন সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. শওকত আলী। অপর একটি মামলা করেন বাবুল মিয়ার অনুসারী মো. খায়রুল। এ ছাড়া আরেকটি মামলা করেন মেম্বার আরজু মিয়ার অনুসারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক শওকত।
তিনটি মামলার মধ্যে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় ৭৩, খায়রুলের মামলায় ১২৩ ও শামসুল হক শওকতের মামলায় ৬ জনকে আসামি করা হয়।
ইতোমধ্যে পৃথক তিনটি মামলায় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান, সাবেক দুই চেয়ারম্যান, বর্তমান একজন মেম্বার, সাবেক মেম্বারসহ ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম, সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কাইয়ুম, সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আরজু মিয়া, সাবেক মেম্বার মো. কামাল খাঁ, সাবেক মেম্বার আবদুল কুদ্দুস, ইউনিয়নের বাসিন্দা মনির হোসেন, মজিবুর রহমান, বেদন মিয়া, সফিকুল ইসলাম, হোসেন মিয়া, নুরুল ইসলাম, ইব্রাহিম মিয়া, বাদল মিয়া, মহিউদ্দিন মিয়া, বাছির মিয়া, মনিরুল ইসলাম, তাজু মিয়া, ইদন মিয়া, সিরাজ মিয়া, খায়ের আলী, মো. শামীম, আম্বিয়া খাতুন, আসমা বেগম, ববি বেগম, শিখা বেগম, লাভলী বেগম, রেখা আক্তার, রীমা বেগম, পারুল বেগম, পারভীন বেগম, নাদিয়া আক্তার, সাফিয়া খাতুন, নাহিয়া ইসলাম অন্তু, সেলিনা বেগম, রেবেকা সুলতানা ও রিমা বেগম।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসাইন জানান, মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।