লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুসরাত জামানের আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। রবিবার (১৯ নভেম্বর) জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মাহমুদ এক চিঠির মাধ্যমে আইনজীবীদের বিষয়টি জানান।
গত ১৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবীদের এক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইনজীবীরা বিচারক নুসরাত জামানের অপসারণ ও সন্তোষজনক প্রতিকার না পাওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য তার আদালত বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত ও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার থেকে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুসরাত জামানের অপসারণের দাবিতে সব আইনজীবী এই কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
জানা গেছে, গত ১৪ নভেম্বর বিচারক নুসরাত জামানের নির্দেশে এজলাসের ভেতর কাঠগড়ায় আবদুল্লাহ আল মামুন নামের এক আসামিকে থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইনজীবীরা তার আদালত বর্জন করেন। এ সময় ওই বিচারককে লক্ষ্মীপুর থেকে প্রত্যাহারের দাবি জানান আইনজীবীরা। বিচারকের নির্দেশে কাঠগড়ায় আসামিকে থাপ্পড় মারার ঘটনায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, বিচারক নুসরাত জামান অনেক আগ থেকেই আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করে আসছেন। তিনি নিজের বিচারিক কার্যক্রমের সময় স্বেচ্ছাচারী ও খামখেয়ালি দৃষ্টিতে সবাইকে বিবেচনা করতেন। তাই আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এটি।
এই নিয়ে বুধবার (১৫ নভেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতি সভা হয়। সেখানে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমদ ফেরদাউস মানিকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাসান আল মাহমুদের সঞ্চালনায় আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বক্তব্য দেন।
বক্তারা সবাই ওই বিচারকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন। সভায় ওই বিচারকের অপসারণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য তার আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আহমদ ফেরদাউস মানিক জানান, বিচারক নুসরাত জামানের বিরুদ্ধে আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ এটা। তিনি আইনজীবীদের সঙ্গে সবসময় অসম্মানজনক আচরণ করতেন। বিচার কাজকে আইনি দৃষ্টিতে না দেখে নিজের স্বেচ্ছাচারী ও খামখেয়ালি দৃষ্টিতে দেখতেন। আদালত পরিচালনা করতেন নিজের খেয়াল খুশি মতো। বিচারকের এমন অবস্থার কারণে আইনজীবীদের সঙ্গে দূরত্ব ক্রমেই বেড়ে ওঠায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি অপসারিত না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা তার কোর্ট করবেন না। আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভের বিস্ফোরণ করলে আমাদের নির্বাহী কমিটির জরুরি সভা করে তার আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত জামান মামলার শুনানির পর আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের এক আসামিকে এজলাসে ডেকে নেন। পরে বিচারক পুলিশ কনস্টেবল কবিরকে নির্দেশ দেন তাকে দুটি চড় দেওয়ার জন্য। বিচারকের নির্দেশে বিচারপ্রার্থী জনগণের সামনেই কনস্টেবল তাকে দুটি চড় দেন। এ সময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়।
বিচারক তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে চড় দিয়েছি, এখন আমি নিজে তোকে চড় মারবো’। এ ঘটনায় আইনগত প্রতিকার চেয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল মামুন। একইসঙ্গে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনার একটি প্রতিবেদন জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়েও পাঠানো হয়।