‘আমাদের জিম্মি করেছে জলদস্যুরা। জাহাজটি সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারা। বেঁচে থাকলে দেখা হবে, আমাদের জন্য দোয়া কইরেন ভাই।’
ভারত মহাসগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর স্বজনদের এই বার্তা পাঠিয়েছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল হক রাজু (২৯)। তিনি জাহাজটিতে এবি (অ্যাবল সিমেন) হিসেবে কর্মরত আছেন। উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে রাজু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। আট বছর ধরে জাহাজে চাকরি করছেন। সর্বশেষ চার মাস আগে বাড়িতে এসেছেন। পরে জাহাজে ফিরে যান।
ছেলে জিম্মি হওয়ার পর থেকে মায়ের কান্না থামাতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, আট বছর ধরে জাহাজে এবি হিসেবে কর্মরত আছে রাজু। চার মাস আগে বাড়িতে এসেছিল। আমার ঘরটি ভাঙা ছিল, রাজু এখন পাকা করতেছিল। ঘরের কাজ শেষ হলে তাকে বিয়ে করাবো। আমরা মেয়েও দেখেছি। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে খবর পেলাম রাজুসহ ২৩ জনকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে দস্যুরা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়ম করে ছেলে ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলতো। কিন্তু কাল রাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনও কথা হয়নি। জানি না ছেলে কী অবস্থায় আছে। সরকারের কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমাদের ছেলেদের যেন মায়েদের কাছে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’
রাজুর স্বজনরা জানান, তাদের জাহাজের একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়েছে। রাতে তাদের সেহেরি খাওয়ার সুযোগ দিয়েছিল দস্যুরা। ওই সময় হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে এসব কথা বলেছিল রাজু। হঠাৎ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় আর কথা বলা সম্ভব হয়নি। রাজুসহ সব অপহৃতকে জীবিত উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা।
রাজুর বড় ভাই জিয়াউল রনি বলেন, বাড়ি থেকে যাওয়ার পর গত নভেম্বরে সে সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে উঠেছিল। মঙ্গলবার ভোররাতে আমার মোবাইলে একটি মেসেজ দেয়। যেখানে লেখা ছিল, ‘আমাদের জাহাজটি দস্যুরা সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, বেঁচে থাকলে দেখা হবে, দোয়া কইরেন ভাই।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, নোয়াখালীর রাজু সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছে বলে শুনেছি। তাদের উদ্ধারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টার দিকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটি মোজাম্বিক থেকে দুবাই যাচ্ছিল। জলদস্যুদের কবলে পড়া চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের জাহাজটি পরিচালনা করছে গ্রুপটির সহযোগী সংস্থা এস আর শিপিং লিমিটেড। জাহাজে ২৩ বাংলাদেশি আছেন। জিম্মি হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন তাদের স্বজনরা।