X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেঘনায় ডুবে গেলো পুলিশ কনস্টেবলের গোটা পরিবার

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
২৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:১৫আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:২৫

‘ভাগনি মারিয়াকে নিয়ে ভৈরবে বেড়াতে যান পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানা। ভাগনির অনুরোধে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ট্রলার নিয়ে ঘুরতে বের হন। মেঘনা নদীতে কয়েকজন পর্যটক মাঝিকে ছবি তোলার জন্য অনুরোধ করেন। এ সময় তিনি হাতের বৈঠা ছেড়ে ছবি তুলে দিচ্ছিলেন। তখন ট্রলারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। আর আমার ভাইসহ তার পরিবার শেষ। এখনও তাদের পাই না। আমার জেঠা-জেঠিও ভাই আর তার পরিবারের লাশের অপেক্ষায় আছেন।’

ভৈরবে পর্যটকবাহী ট্রলারডুবিতে নিখোঁজ কনস্টেবল সোহেল রানার চাচাতো ভাই ইমরান হোসেন এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যার দিকে ভৈরব জেলার মেঘনা নদীর রেলওয়ের দুই সেতু সংলগ্ন এলাকায় ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার পূর্ব ফতেহাবাদ গ্রামের সাবেক সেনা সদস্য আবদুল আলিমের ছেলে কনস্টেবল সোহেল রানা, তার স্ত্রী মৌসুমী আক্তার (২৫) দুই সন্তান মাহমুদা সুলতানা ইভা (৪) ও  রাইসুল ইসলাম (৩) নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার কাজ চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত (দুপুর ২টা) সন্ধান পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ সোহেলা রানা ভৈরব হাইওয়ে থানায় কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন। ২০১১ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন।

মেঘনায় ডুবে গেলো পুলিশ কনস্টেবলের গোটা পরিবার

সোহেল রানার চাচাতো ভাই ইমরান হোসেন বলেন, ‘ভাগ্যক্রমে আমাদের ভাগনি মারিয়া বেঁচে আছে। সে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ভাগনি আমাদের জানিয়েছে, নৌকা যখন ডুবে যাচ্ছিল সে তার মামাতো ভাইবোনদের দুই জনকে দুই হাতে নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেয়। ঝাঁপ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন হাত থেকে ছুটে যায়। সে অন্যজনকে শক্ত করে ধরে রাখে। কিন্তু যখন সেও ডুবে যাচ্ছিল তখন তার হাত ফসকে অন্যজনও ছুটে যায়। শেষ মুহূর্তে সেও ডুবে যাচ্ছিল। শুধু দুই হাত ওপরের উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে কেউ তার হাত ধরে উপরে ওঠায়। কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারে সে নৌকায় আছে।’

দুর্ঘটনার পরদিন শনিবার বেলা ১১টায় সোহেল রানার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। তার বাড়িতে শত শত প্রতিবেশীর ভিড়। সবার চোখেই পানি। কিন্তু তার পরিবারের কোনও সদস্য বাড়ি নেই। বাবা-মাসহ অন্য আত্মীয়-স্বজনরা ভৈরবের ঘটনাস্থলে আছেন। তারা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। এখন লাশের অপেক্ষায় ক্ষণ গুনছেন।

ফতেহাবাদ ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক বলেন, ‘ঘটনার খবর শুনে আমিসহ সোহেলের বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনরা ভৈরবের সেই ঘটনাস্থলে যাই, সেখানে এক হৃদয়-বিদারক দৃশ্য। ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যদের না পেয়ে তার বাবা-মা বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন।’

এর আগে, শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকেলে ভৈরব সেতু এলাকার মেঘনা নদীর পাড় থেকে একটি নৌকা নিয়ে ১৬ যাত্রী আশুগঞ্জ সোনারামপুর চরে ঘুরতে যায়। সেখান থেকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভৈরবে ফেরার পথে মাঝ নদীতে নৌকাটিকে একটি বাল্কহেড ধাক্কা দেয়। এতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও নৌ পুলিশ ৯/১০ জনকে উদ্ধার করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় দুই জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে এক নারীকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় রুবা নামের এক ছাত্রী ও পুলিশ কনস্টেবলের ভাগিনা মারিয়াকে অন্য আরেকটি ট্রলার জীবিত উদ্ধার করেন। বাকিরা এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

/এফআর/
সম্পর্কিত
ভৈরবে ট্রলারডুবি: কনস্টেবলসহ আরও ২ জনের লাশ উদ্ধার
ভৈরবে ডুবে যাওয়া ট্রলারের আরও ৩ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার
নিখোঁজ পুলিশ সদস্যের স্ত্রী ও শিশুকন্যার মরদেহ উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
বাংলাদেশের আম নিতে চায় চীন
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
গাজীপুর-নীলফামারীর দুই হাসপাতালে দুদকের অভিযান
এলপিএলের ড্রাফটে চার বাংলাদেশি
এলপিএলের ড্রাফটে চার বাংলাদেশি
মাদ্রাসা ক্যাম্পাস সবুজায়নের নির্দেশ
তীব্র তাপপ্রবাহমাদ্রাসা ক্যাম্পাস সবুজায়নের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ