কুমিল্লায় শিক্ষা প্রকৌশলের দরপত্র নেওয়াকে কেন্দ্র করে এক ঠিকাদারকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার বিরুদ্ধে। কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু ও তার বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হন ঠিকাদার মাসুদুল ইসলাম বাবু।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকার শিক্ষা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম রিন্টু কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থক গ্রুপের নেতা। অন্যদিকে ঠিকাদার মাসুদুল ইসলাম বাবু সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা গ্রুপের নেতা। দীর্ঘদিন বাহার গ্রুপের নেতারা একচেটিয়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরসহ বিভিন্ন অফিসে টেন্ডার নিয়ে কাজ করে আসছিল। আর আঞ্জুম সুলতানা সীমা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পর তার গ্রুপের নেতারা সিন্ডিকেট ভেঙে টেন্ডার পান। এরপর থেকে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব আরও জোরালো হয়ে ওঠে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়ে উভয় গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলে আসছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মাসুদুল জানান, সোমবার দুপুরে তিনি কাজের বিষয়ে কথা বলতে শিক্ষা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে যান। এ সময় তার পিছু নেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রিন্টু ও তার নেতাকর্মীরা। পরে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল মাসুদকে পেছন থেকে ধরে ফেলে। তারা মাসুদকে শিক্ষা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তাকে বেদম মারধর শুরু করে। এ সময় কয়েকজন পিস্তল বের করে তার মুখে আঘাত করে এবং টেন্ডারের জন্য এলে হত্যার হুমকি দেয়।
তিনি বলেন, তারা আমাকে সবাই লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারে। ইয়াছিন, সোহাগ, কালো জালাল আমাকে প্রথম মারা শুরু করে। সবগুলো লাঠি তারা আমাকে মেরেই ভেঙেছে। এ সময় কয়েকজন আমার মুখে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে। আমি দিশেহারা হয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে প্রবেশ করি। তার সামনেই সেখানে আমাকে আবার মারধর করে। কেউ আমাকে বাঁচাতে আসেনি। পরে আমি ফ্লোরে লুটয়ে পড়ি। সেখান থেকে কয়েকজন আমাকে কুমিল্লার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
তারা চায় সিন্ডিকেট করে রাখতে উল্লেখ করে ঠিকাদার বলেন, যেন কেউ কাজ না নিতে পারে। তারা আমাকে মারছিল আর বলছিল, ‘তোর এমপি কই? তোরে বাঁচাইতে আসতে বল। আর টেন্ডারের জন্য আসবি? তোদের বহুত সুযোগ দিছি, আর নাহ। এই তার হাত-পা ভাঙ।’ এ কথা বলার পর সবাই আমার হাত পায়ে আবার মারতে শুরু করে।
অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টুকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে কল করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঘটনা জানতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী ইমামকে কল দিলে তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন বলে ফোন রেখে দেন।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঠিকাদার মাসুদুল ইসলামের পক্ষ থেকে থানা পুলিশে অভিযোগ করার খবর পাওয়া যায়নি।