চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার বাসিন্দাদের বন্য হাতির আক্রমণ থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে কর্ণফুলী-আনোয়ারা পিএবি সড়কটির কর্ণফুলীর দৌলতপুর স্কুল এলাকা এবং আনোয়ারা উপজেলার সিইউএফএল সড়কের জাইল্লাঘাটা এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন লোকজন। সকাল ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ চলছিল।
সড়ক অবরোধের কারণে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কের দুই পাশে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে।
সড়ক অবরোধের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন চাকরিজীবীরা। আটকা পড়েছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের গাড়ি। এদিকে বিক্ষোভকারীদের দাবি হাতির বিষয়টি নিরসনের জন্য প্রশাসন চার দিনের সময় নিয়েও তারা কোনো সুরাহা করেনি। এ কারণে তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন। হাতির বিষয়টি স্থায়ী কোনও সমাধান না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, কেইপিজেড এলাকার বনাঞ্চলে চারটি বন্য হাতির অবস্থান রয়েছে। এসব হাতি বিভিন্ন সময়ে লোকালয়ে এসে মানুষের ঘরবাড়িতে তাণ্ডব চালায়। ২০১০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত কেইপিজেড এলাকার বনাঞ্চলে অবস্থান করা বন্য হাতি কর্ণফুলীর বড় উঠান, আনোয়ারার বৈরাগ ও বারশত ইউনিয়নের বিভিন্ন লোকালয়ে এবং আশপাশের গ্রামে হামলার ঘটনায় অন্তত ৩০-৩৫ জন স্থানীয় বাসিন্দার প্রাণহানি, ১৫০-২০০ জন স্থানীয় বাসিন্দা গুরুতর আহত, প্রায় ৫০০ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করে। পাশাপাশি কর্ণফুলী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামেও একাধিকবার বন্য হাতির তাণ্ডবে ভাঙচুর ও ক্ষতিসাধনের ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম বলেন, ‘আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলায় বারবার হাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। কেইপিজেড এলাকার পাহাড়ে থাকা চারটি হাতি বিভিন্ন সময়ে লোকালয়ে এসে ঘরবাড়িতে তাণ্ডব চালাচ্ছে। এতে গত ১৫ বছরে বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হাতির আক্রমণ থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষায় কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এসব হাতি এখান থেকে অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবি আমাদের। আমরা এ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস না দেওয়া পর্যন্ত রাস্তা থেকে সরবো না।’
এর আগে, শনিবার (২২ মার্চ) রাত ১টার দিকে উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শাহমীরপুর জমাদার পাড়ায় হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী আরমান জাওয়াদ নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়। নিহত শিশু ওই এলাকার মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ছেলে। এ ঘটনায় শিশুটির মা খজিমা বেগম (৩০) গুরুতর আহত হন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাতির আক্রমণে তিন মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর প্রতিবাদে শিশুটির স্বজনসহ এলাকাবাসী নিহত শিশুটির লাশ নিয়ে শনিবার ভোর ৬টা থেকে কর্ণফুলী পিএবি সড়কটি দৌলতপুর স্কুল এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা হাতির আক্রমণ বন্ধের দাবি জানায়। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার দিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। এ আশ্বাসে বিক্ষোভকারী লোকজন সড়ক ছেড়ে দেন। চার দিনেও এর কোনও সমাধান না হওয়ায় পুনরায় বিক্ষোভে নেমেছেন লোকজন।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষার দাবিতে এলাকার লোকজন সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি।’