X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২
চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে ১৯১৩ মামলা

৬০ দিনে মামলা নিষ্পত্তির কথা, ঝুলছে বছরের পর বছর

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
০১ মে ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ০১ মে ২০২৫, ০৮:০১

বকেয়া মজুরির দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের ‘সি টেক্স’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে মামলা করেন সজল শীল নামের এক শ্রমিক। ২০২০ সালে করা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ এখনও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ মামলাটি নিষ্পত্তি হতে পারে তার সঠিক ধারণা নেই বাদীপক্ষের আইনজীবীর। এভাবে চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালতে বছরের পর বছর ঝুলছে প্রায় দুই হাজার মামলা। এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

শ্রম আদালত সূত্রে জানা যায়, শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের শেষ ভরসাস্থল হিসেবেই গঠন করা হয়েছিল শ্রম আদালত। নগরের পাঁচলাইশ এলাকায় অবস্থিত দুটি শ্রম আদালতে ঝুলছে এক হাজার ৯১৩টি মামলা। এর মধ্যে প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এক হাজার ৩৬৫টি এবং দ্বিতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৫৪৮টি। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে এসব মামলা বিচারাধীন।

চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ লাখ। শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করতে পারেন শ্রমিকরা।

আইন অনুযায়ী শ্রম আদালতে মামলা করার ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। এ সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় নেওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে এমন বেশ কিছু মামলা আছে, যেগুলো বছরের পর বছর ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না।

আদালত সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শ্রম আদালতে বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরাই বেশি মামলা করে থাকেন। বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা, চাকরি পুনর্বহাল, বকেয়া মজুরি আদায়, যেকোনো ধরনের পাওনাদি আদায় ও চাকরি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শ্রম আদালতে মামলা করা যায়। এ ছাড়া কোনও প্রতিষ্ঠান বা কারখানার মালিক বা কোনও শ্রমিক শ্রম আইনের আদেশ পালন না করলে বা লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা হয়। ট্রেড ইউনিয়নের নির্বাচন সংক্রান্ত মামলাগুলো করা হয় শ্রম আদালতে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শ্রম আদালতের আইনজীবী এস এম সাহাব উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শ্রম আদালতের মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করার কথা থাকলেও তা নানা কারণে হয়ে ওঠে না। ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে কারণ দর্শানো সাপেক্ষে আরও ৯০ দিন সময় নিয়ে মোট ১৫০ দিনের মধ্যে মামলা শেষ করার বাধ্যবাধকতা আছে। এই সময়ের মধ্যে খুব কম মামলায় নিষ্পত্তি হচ্ছে।’ 

২০২৩ সালে করা কয়েকটি মামলা আছে, যেগুলোর এখন পর্যন্ত জবাবও দাখিল হয়নি উল্লেখ করে এস এম সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এর মধ্যে একটি মামলায় ধার্য তারিখ ছিল গত ১ জানুয়ারি। এরপর এই মামলায় পরবর্তী ধার্য তারিখ পড়ে গত ২৪ এপ্রিল। অর্থাৎ দুই মাসের বেশি সময় পর একেকটি মামলার ধার্য তারিখ পড়ছে। এতে করে মামলার দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। ২০১৭ সালের অনেক মামলাও নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।’ 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের সিনিয়র আইনজীবী জিয়া হাবিব আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের দুটি শ্রম আদালত নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় পরিচালিত হয়। শ্রমিকরা তাদের অধিকার, পাওনা আদায়ে এখানে মামলা করেন। আদালত ভবনের বাইরে থাকায় অনেক আইনজীবী চাইলেও শ্রম আদালতে মামলা পরিচালনা করতে যেতে পারেন না। কারণ একই সময়ে চট্টগ্রামে আদালতেও গুরুত্বপূর্ণ মামলা থাকে। তাই আমাদের আইনজীবীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শ্রম আদালত দুটিও যাতে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে নিয়ে আসা হয়। তাতে বিচারপ্রার্থীরা আরও বেশি সুবিধা পাবেন।’

চট্টগ্রাম প্রথম শ্রম আদালতের পেশকার পলাশ বণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রথম শ্রম আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এক হাজার ৩৬৫টি। এর মধ্যে কিছু মামলায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ আছে। নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা যায় না।’

চট্টগ্রাম দ্বিতীয় শ্রম আদালত সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে এই আদালতে ৫৪৮টি মামলা বিচারাধীন আছে। গত এক বছরে এই আদালতে ২৩৪টি মামলা করা হয়েছে। একই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে ২৯৮টি। 

চট্টগ্রাম কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের উপমহাব্যবস্থাপক শিপন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ লাখের মতো হবে। শ্রম আইনের বেশিরভাগ অধ্যায় নিয়ে আমরাই কাজ করে থাকি। যেমন শ্রমিকদের ঠিকমতো মালিকপক্ষ পাওনাদি পরিশোধ করছে কিনা, নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড দিলো কিনা, কারখানায় কাজ করার পরিবেশ আছে কিনা, মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হচ্ছে কিনাসহ নানা বিষয়ে আমরা দেখভাল করে থাকি। কোনও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক আমাদের কাছে অভিযোগ করলে উভয় পক্ষকে নিয়ে আমরা বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করে থাকি। সেটি না হলে মামলা করা হয়।’

সজল শীল বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে মামলাগুলো ঝুলছে। এ অবস্থায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে শ্রমিকরা মামলা চালানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আমি আদৌ জানি না, আমার মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
দুদকের মামলায় খালাস পেলেন হানিফ পরিবহনের মালিক
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবার অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে
বৈদেশিক মুদ্রা ডাকাতি: একজন কারাগারে, রিমান্ডে ৫  
সর্বশেষ খবর
দুদকের মামলায় খালাস পেলেন হানিফ পরিবহনের মালিক
দুদকের মামলায় খালাস পেলেন হানিফ পরিবহনের মালিক
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবার অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবার অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে
প্রথম সেট হেরেও কোয়ার্টার ফাইনালে আলকারেজ
প্রথম সেট হেরেও কোয়ার্টার ফাইনালে আলকারেজ
চিকিৎসা ব‍্যয়ভার বিতর্ক: যা বললেন ফরিদা পারভীনের ছেলে
চিকিৎসা ব‍্যয়ভার বিতর্ক: যা বললেন ফরিদা পারভীনের ছেলে
সর্বাধিক পঠিত
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
বিশেষ বিমানে গুজরাট থেকে দুই শতাধিক ‘বাংলাদেশি’কে সীমান্তে পাঠালো ভারত 
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন
নদীতে ইলিশের দেখা মিলছে না কেন