X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের নিয়ে বিপদে বন্যাদুর্গত মানুষ

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
২৩ জুন ২০২২, ২৩:১৯আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ২৩:১৯

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জ হাওরের ১০ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৬৪ ইউনিয়নের শতা‌ধিক গ্রামের এক লাখের বেশি মানুষ। ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গত এলাকার প্রায় ১৫ হাজার মানুষ‌কে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়ে‌ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে শিশু খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে। 

বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দেখা গেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও শিশুদের নিয়ে বিপদে আছেন বন্যাদুর্গতরা। শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি ও খাবারের তেমন একটা ব্যবস্থা নেই।

করিমগঞ্জের সুতারপাড়া দারুল সুন্নাহ মাদ্রাসা আশ্রয়কেন্দ্রে ১৫ মাসের শিশুকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তাহমিনা আক্তার (২০)। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘একমাস আগে স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। শিশুসন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি আশ্রয় নিয়েছিলাম। এখন বাড়িতে পানি উঠেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নিজে ডালভাত খাচ্ছি। কিন্তু শিশুকে কিছু খাওয়াতে পারছি না। নিরাপত্তার অভাবে দুধও খাওয়াতে পারছি না। খুবই বেকায়দায় আছি।’ 

শিশুদের নিয়ে বিপদে আছেন বন্যাদুর্গতরা

বাড়িতে বন্যার পানি উঠায় সুতারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন বিলাসী বেগম (৭০), আজোহা বেগম (৬০), রিনা আক্তার (৪৫) ও খায়রুন্নেসা খাতুনসহ (৫০) ২০টি পরিবারের সদস্যরা। 

সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, সবাই মিলে রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু শিশুদের খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই। বিলাসী বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার বয়সে এমন বন্যা দেখি নাই। দুই দিনেই সবকিছু ডুবায়া দিল পানিতে। ঘরে কিছু শুকনো ধান ছিল সেগুলোও ভিজে পচেছে। এইহানে খুব বিপদে আছি।’

একই ইউনিয়নের কান্দারবাড়ি এলাকায় দেখা গেছে, সবার বাড়িঘরে পানি থই থই করছে। ঘরের ভেতরে এবং বাইরে পানি। কান্দারবাড়ি এলাকার সোহেল মিয়া (৫০) বাড়ির সামনে পানিতে দাঁড়িয়ে আছেন। দরজায় তার স্ত্রী ও ১০ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে পানির দিকে তাকিয়ে আছেন। ঘরের সামনে পানিতে ভাসছে মৃত গরু। চারদিকে দুর্গন্ধ। 

শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি ও খাবারের তেমন একটা ব্যবস্থা নেই

সোহেল মিয়া বলেন, ‘পানি উঠলেও বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছি না। ঘরের জিনিসপত্র এভাবে ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে ফিরে এসে কিছুই পাবো না। সব চুরি হয়ে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের অনেক গরু-ছাগল পানিতে ভেসে গেছে। আমার ঘরের পাশে মৃত গরু ভাসছে। দুর্গন্ধে ঘরে থাকতে পারছি না। নিরাপদ পানি ও খাবারের সংকটে আছি। কোনও ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাইনি।’

সুতারপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কামাল মিয়া বলেন, ‘পানিবন্দি পরিবারগুলোকে বারবার আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসার কথা বললেও বেশিরভাগই আসেনি। ঘরের মধ্যে পানির ওপর মাচা বানিয়ে থাকছে। তারপরও আসে না। ঘরে ধান ও জিনিসপত্র রেখে আসতে চায় না অনেকে। আমরা সবার খোজঁখবর রাখছি। সাহায্য-সহযোগিতা করেছি এবং করবো।’

গত তিন দিন ধরে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে

এদিকে, সুপেয় পানির অভাব থাকায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগের শঙ্কা। সবার ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় নিরাপদ পানি পাওয়া যাচ্ছে না।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় পানিবাহিত রোগীদের চিকিৎসায় ইতোমধ্যে ১৬৮টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলা সদরের হাসপাতালগুলো। এছাড়া পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত আছে। প্রচুর পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।’ 

এদিকে, গত তিন দিন ধরে কিশোরগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। দুর্গত এলাকায় বাড়ছে সাপের আতঙ্ক। চলতি সপ্তাহে করিমগঞ্জ উপজেলার দুজন সাপে কাটা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে উপজেলার দেহুন্দা ইউনিয়নের আলাউদ্দিন (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। 

পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৬৪ ইউনিয়নের শতা‌ধিক গ্রামের এক লাখের বেশি মানুষ

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। দু’একদিন পর পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে।’

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাপ্লাবিত গ্রামগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ পর্যন্ত ১০০১৪টি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, ‘প্রতিদিন বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছি। সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলার সব দফতরের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। সবাই মিলে বন্যাদুর্গতদের সহায়তা করছি।’ 

/এএম/
সম্পর্কিত
ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
তলিয়ে গেছে দুবাই বিমানবন্দর, বিপাকে প্রবাসীরা
৭৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টি দেখলো আমিরাত, মরু শহর দুবাইয়ে বন্যা
সর্বশেষ খবর
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শুধু চাকরির পেছনে ছুটবে না, উদ্যোক্তা হবে:  স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের