সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে পিটিয়ে হত্যায় অভিযুক্ত স্কুলছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতুকে (১৯) গ্রেফতার করেছে র্যাব। বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জিতু নগরহাওলা গ্রামের বশির শরিফ (১৮) নামে তার সহপাঠী বাল্যবন্ধুর আশ্রয়ে ছিল। বশির নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বাইউসোনা গ্রামের বাসিন্দা। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার এনআরজি স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কারখানায় চাকরি করেন। দেড় মাস আগে ওই কারখানায় মেকানিক্যাল হেলপার পদে চাকরি নেন। তার বড় ভাই ও বোনের সঙ্গে নগরহাওলা গ্রামের মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা: প্রধান অভিযুক্ত গ্রেফতার
বশির বলেন, ‘আমি জিতুর সঙ্গে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করেছি। নবম শ্রেণি থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। বুধবার (২৯ জুন) ভোরে নানার বাড়ি মানিকগঞ্জ থেকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তায় এসে আমাকে ফোন করে জিতু। আমার বাসায় থেকে কয়েকদিন ঘুরবে বলে জানাই। পরে তাকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজারে আসতে বলি। সেখান থেকে বাসায় নিয়ে আসি। আমি বড় ভাই ও বোনের সঙ্গে একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকি। এক ঘরে জায়গা না হওয়ায় জিতুকে পাশের সিদ্দিকুর রহমানের বাসার ভাড়াটিয়া পরিচিত বড় ভাই সুজনের ঘরে থাকার ব্যবস্থা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিতু আমার এখানে আসার পর জানাই, তার বাবা বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাবে। পাঠানো টাকা উঠাতে পার্শ্ববর্তী দোকানে গেলে হঠাৎ র্যাব সদস্যরা এসে জিতুর ছবি দেখান। তাকে চিনি বললে কোথায় আছে জানতে চান তারা। আমি তাদের সুজনের ভাড়া বাড়িতে নিয়ে গেলে দেখি জিতু ঘুমিয়ে আছে। পরে র্যাব সদস্যরা তাকে ডেকে তুলে নিয়ে যান। জিতু শিক্ষককে পিটিয়ে পালিয়ে এখানে এসেছে, তা আমি জানতাম না।’
আরও পড়ুন: শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা, মামলায় কিশোর বললেও ছাত্রের বয়স ১৯
যেই বাসা থেকে জিতুকে গ্রেফতার করা হয়, সেই বাসার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘তাকে আমরা চিনি না। বুধবার সন্ধ্যার নামাজের আগে বাড়ির ভেতর হঠাৎ কিছু লোক এসে ঘরে তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ঘুম থেকে জিতুকে ডেকে তোলে তারা। পরে বাড়িতেই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।’
প্রসঙ্গত, গত শনিবার আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা চলছিল। শিক্ষক উৎপল কুমার মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ মাঠ থেকে ক্রিকেট খেলার স্টাম্প নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায় জিতু। উৎপলকে দ্রুত উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর উৎপল কুমারের ভাই অসীম কুমার বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় স্কুলছাত্র জিতুকে প্রধান আসামি ও আরও তিন-চার জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলা করেন।