X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিনে ১২০০ টাকার খাবার লাগে ‘সম্রাটের’

বিমান সিকদার, ফরিদপুর
০৩ জুলাই ২০২২, ১৯:৩৫আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২২, ২০:০৬

নাম তার ‘সম্রাট’। ফরিদপুরের বাজারে আসা সবচেয়ে বড় ষাঁড়। ওজন ৪০ মণ। দিনে ১২০০ টাকার খাবার লাগে সম্রাটের। কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গরুর মালিক দাম চাইছেন ১০ লাখ টাকা। স্থানীয় বাজারে প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে বেশি দাম পাওয়ার আশায় পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন মালিক। খামার মালিকের আশা, ঢাকার বাজারে সম্রাটের কাঙ্ক্ষিত দাম পাবেন।

সম্রাটের মালিক রফিকুল ইসলাম সবুজ ফরিদপুর শহরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর বিলমামুদপুরের বাসিন্দা। ওই এলাকায় মাইশা ডেইরি ফার্ম নামে খামার দিয়েছেন। খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে ১১৮টি গরু। সবুজ ১৯৯৪ সালে তিনটি গাভি দিয়ে ফার্ম শুরু করেন। কোরবানিতে বিক্রির জন্য পাঁচটি গরু মোটাতাজা করেছেন। এর মধ্যে সম্রাটের ওজন ৪০ মণ।

এই ফার্মে ৪২ মাস আগে সম্রাটের জন্ম হয়েছিল। লম্বায় ১১ ফুট, উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট। সম্রাটের শরীরে মাংস রয়েছে ১২০০ কেজি। ইতোমধ্যে ফার্ম থেকে আরও তিনটি গরু বিক্রি করেছেন মালিক। আট মণ ওজনের গরুটি এক লাখ ৯০ হাজার, সাত মণ ওজনের গরুটি এক লাখ ৭০ হাজার ও ছয় মণ ওজনের গরুটি এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।

প্রাকৃতিক ঘাস আর বিশেষ যত্নে বড় করে তোলা হয়েছে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টিকে। নিয়মিত খাবারের সঙ্গে দেওয়া হয় আপেল, কমলা ও আঙুর। আকার-আকৃতিতে যেকোনও গরুর তুলনায় বড় হওয়ায় মালিক নাম রেখেছেন সম্রাট। তাকে দেখতে খামারে প্রতিদিন ভিড় জমায় মানুষ।

সম্রাটকে কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে

জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এ বছর ৫৩ হাজার ৮৭৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ৩৬ হাজার ৩২৩টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ১৭ হাজার ৫৫২টি। কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৪১ হাজারের কিছু বেশি। সে হিসাবে জেলায় প্রায় ১২ হাজারের বেশি গরু উদ্বৃত্ত থাকবে। যেগুলো জেলার বাইরে বিক্রি করা যাবে। 

জেলায় খামারি রয়েছেন ছয় হাজার ৬৯৫ জন। পশু বিক্রির জন্য ৩৩টি হাট রয়েছে। এছাড়া ৯ উপজেলায় অনলাইনে পশু বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি হাটে মেডিক্যাল টিম রয়েছে।
 
মাইশা ডেইরি ফার্মের কর্মচারী রাশেদ শেখ বলেন, ‘সম্রাটকে ৪২ মাস ধরে লালন-পালন করছি। টাকার দরকার, তাই ফার্মের মালিক সম্রাটকে বিক্রি করে দেবেন। এ জন্য খারাপ লাগছে। সম্রাট শান্ত প্রকৃতির। জেলার সবচেয়ে বড় গরু।’

সম্রাটকে দেখতে আসা আসলাম শেখ বলেন, আমি মধুখালী থেকে এসেছি সম্রাটকে দেখতে। আমার মতো অনেকে প্রতিদিন সম্রাটকে দেখতে আসছেন। গরুটি খুব শান্ত। আমার এত টাকা নেই, থাকলে কিনে রাখতাম।

সবুজের খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে রয়েছে ১১৮টি গরু

রফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘১৯৯৪ সালে তিনটি গাভি দিয়ে ফার্ম শুরু করেছি। ধীরে ধীরে এখন ফার্মে ছোট-বড় মিলিয়ে ১১৮টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে ৪৮টি গাভি, বাকিগুলোর মধ্যে কিছু বাছুর ও ষাঁড়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার কোরবানি ঈদের বিক্রির জন্য পাঁচটি গরু মোটাতাজা করেছি। ইতোমধ্যে তিনটি বিক্রি হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে ৪০ মণ ওজনের সম্রাট। সম্রাটের দাম চাচ্ছি ১০ লাখ টাকা। কিন্তু যারা কিনতে আসছেন তারা আট লাখের বেশি বলছেন না। এ কারণে বিক্রি করছি না।’

সবুজ বলেন, ‘প্রত্যাশিত দাম না পেলে সম্রাটকে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাবো। পদ্মা সেতুর ফলে ভোগান্তি হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ঢাকায় নিয়ে যাবো। ঢাকায় নিয়ে গেলে ভালো দাম পাবো, আশা করছি।’

তিনি বলেন, ‘৪২ মাস আগে এই ফার্মেই জন্ম সম্রাটের। জন্মের সময় গ্রোথ বেশি ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বড় করবো। ৪২ মাস বয়স এখন সম্রাটের। ওজন ৪০ মণ। মাংস হবে ১২০০ কেজি।’

সবুজ বলেন, ‘প্রতিদিন এক হাজার ২০০ টাকার খাবার লাগে সম্রাটের। ঘাস, খড়, ভুসি, ফিডের পাশাপাশি প্রতিদিন আপেল, আঙুর খাওয়ানো হয়। এতদিন লালন-পালন করেছি, বিক্রি করতে কষ্ট লাগছে। কিন্তু টাকার প্রয়োজন, তাই বিক্রি করছি।’

এদিকে, কোরবানির পশু বিক্রির জন্য জেলায় ৩৩টি হাট বসেছে। এরমধ্যে অন্যতম টেপাখোলা পশুর হাট। 

৪২ মাস আগে সম্রাটের জন্ম হয়েছিল, লম্বায় ১১ ফুট, উচ্চতা প্রায় ৬ ফুট

হাটের ইজারাদার আবু সালেহ বলেন, ‘টেপাখোলা পশুর হাটটি ফরিদপুরের মধ্যে অন্যতম। এ বছর এখনও হাট জমেনি। বর্তমানে মাঝারি ধরনের গরু বিক্রি হচ্ছে। বড় গরু এখনও বিক্রি শুরু হয়নি। ঈদের দুই-তিন দিন আগে বড় গরু বেচাকেনা শুরু হবে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. এ কে এম আসজাদ বলেন, ‘জেলায় এ বছর ৫৩ হাজার ৮৭৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু ৩৬ হাজার ৩২৩টি এবং ছাগল ও ভেড়া ১৭ হাজার ৫৫২টি।’

তিনি বলেন, ‘জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা ৪১ হাজারের কিছু বেশি। সে হিসাবে প্রায় ১২ হাজারের বেশি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। যেগুলো জেলার বাইরে বিক্রি করা যাবে। এছাড়া ৯ উপজেলায় অনলাইনেও গরু বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি হাটে মেডিক্যাল টিম বসানো হয়েছে।’  

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় খামারিরা এ বছর বেশি লাভবান হবেন। জেলায় দাম ভালো না পেলে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় পশু নিয়ে যেতে পারছেন। সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরতে পারছেন খামারিরা। তবে জেলার সবচেয়ে বড় গরু সম্রাট এখনও বিক্রি হয়নি। ওই ফার্মের মালিককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

/এএম/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
যাত্রী কল্যাণ সমিতিঈদুল আজহায় ২৭৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৯৯, আহত ৫৪৪
রাজধানীর ফাঁকা রাস্তায় যাত্রীদের স্বস্তি
সর্বশেষ খবর
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
দ্বিতীয় বিয়ে করায় স্বামীর অঙ্গহানি করলেন স্ত্রী
প্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
ভারতে দ্বিতীয় দফায় ভোটপ্রচণ্ড গরমেও ভোটকেন্দ্রে ভোটার, ভোটদানের হার ৬১ শতাংশ
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!