গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির লাশ প্রাইভেটকার থেকে উদ্ধারের পর ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরে মহানগরীর গাছা থানার বড়বাড়ির বগারটেক এলাকার সড়কের পাশে গাড়ি থেকে লাশ দুটি উদ্ধার হয়।
মৃতরা হলেন মহানগরীর গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে এ কে এম জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। এর মধ্যে জিয়াউর রহমান মামুন গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তার স্ত্রী জলি টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন।
প্রাইভেটকার থেকে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধারশিক্ষক জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ বলেন, ওই দম্পতি গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে স্বপরিবারে বসবাস করতেন। জিয়াউর রহমান মামুনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দড়ি কাঁঠাল এলাকায়। তারা পৃথক স্কুলে চাকরি করলেও প্রতিদিন একসঙ্গে নিজস্ব প্রাইভেটকারে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) স্কুলের কাজ শেষে বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে মামাতো ভাইকে গাড়িতে তুলে জিয়াউর নিজে গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী জলির স্কুলে যান। সেখান থেকে জলিকে গাড়িতে তুলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। পথে মামাতো ভাইকে রাস্তায় নামিয়ে দেন তারা। পরে জিয়াউর রহমানের ছেলে এ কে এম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সন্ধ্যা পৌঁনে ৭টার দিকে তার বাবার মোবাইলফোনে কল দেন। কিন্তু বাবা ফোন রিসিভ না করায় তার মায়ের ফোনে কল দেয়। পরে তার মা বাসায় আসার কথা জানিয়ে বলেন ‘আমরা পথে আছি, কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি।’
শিক্ষক জিয়াউরের ছেলে তৌসিফুর রহমান মিরাজ বলেন, মায়ের সঙ্গে কথা বলে ক্লান্তির ভাব বুঝতে পারি। তবে দীর্ঘক্ষণ পরেও বাসায় না আসায় আমি আবারও ফোন করি। কিন্তু বাবা-মা কেউ কল রিসিভ করেননি। এরপর একাধিকবার কল করেও কোনও সাড়া পাইনি। তাদের সন্ধানে রাতভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করা হয়। গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব, পশ্চিম থানা এবং পূবাইল থানায়ও যোগাযোগ করা হয়। বড় চাচা ও ফুপাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা পূবাইল থানায় খোঁজ করে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফিরছিলাম। পথে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে বাবার গাড়িটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আমরা গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে চালকের সিটে বাবা এবং তার পাশের সিটে মায়ের শীতল ও নিথর দেহ দেখতে পাই।
এদিকে শিক্ষক দম্পতিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার দাবি করেছেন স্বজনরা। জিয়াউরের বড়ভাই রিপন ও শ্যালিকা আহমিদা আক্তার লিমার দাবি, ‘মৃতদের গলায় কালো দাগ রয়েছে। তাদের মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনা যদি পরিকল্পিত না হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো। শুধু দুই জনের জীবন নিয়ে গেছে।’
এদিকে ময়নাতদন্তের ও জানাজা শেষে দুই শিক্ষককে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
শিক্ষক জিয়াউরের ভগ্নিপতি আব্দুর রশিদ জানান, প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর মাহমুদা আক্তার জলিকে বিয়ে করেন জিয়াউর রহমান মামুন। দ্বিতীয় সংসারে তাদের কোনও সন্তান নেই। তবে প্রথম সংসারের একমাত্র সন্তান তৌসিফুর রহমান মিরাজ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনা তদন্তে কাজ চলছে। বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহত শিক্ষক দম্পত্তির লাশ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান তিনি।