X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রায় চার যুগ ধরে সংসার সামলাচ্ছেন দুই সহোদর

রায়হানুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:৪৭আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৫০

প্রায় চার যুগ ধরে দাম্পত্য জীবন পার করছেন দুই সহোদর নছু মিয়া ও রমিজ উদ্দিন। তাদের পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততির মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ায়ও কোনও ঘাটতি নেই। এতদিন আর্থিকভাবে চলতে পারলেও বর্তমানে দৈনন্দিন চাহিদার সঙ্গে পেরে উঠছেন না। তাই এ বয়সে জীবিকার জন্য স্থায়ী কোনও সুযোগের আবেদন জানিয়েছেন তারা।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদিঘী (মুন্সীপাড়া) গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে নছু মিয়া (৬০) এবং রমিজ উদ্দিন (৫০)। জন্মের পর থেকেই তারা খর্বাকৃতির হন।

তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে নছু মিয়া ও রমিজ উদ্দিনের উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট। একজন ৪৫ আরেকজন ৩৫ বছর আগে বিয়ে করেছেন। দুই ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা এখনো তাদের সিদ্ধান্তে ও নির্দেশনা মেনে চলেন। তারা উচ্চ শিক্ষিত হতে না পারলেও সমাজে সহজ-সরলভাবেই চলাফেরা করেন। এলাকার মানুষও তাদের সম্মান দেয়। এতেই তারা সন্তুষ্ট।

নছু মিয়া দুই ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। সমাজের বিপথগামী বা মাদকাসক্ত যুবকদের সঙ্গে মিশতে দেন না ছেলেকে। আদব-কায়দা শিখিয়েছেন। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষিত করতে না পারলেও এতে তার কোনও আক্ষেপ নেই। সমাজের মানুষের কাছে ছেলের ভালো আচার-ব্যবহারের কথা শুনে তিনি খুব খুশি।

তার ছেলে আইয়ুব আলী এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চালিয়ে সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে বর্তমানে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় বাড়াতে পারছেন না। ফলে অনেকটা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি। এতো কষ্টের মধ্যেও তিনি ভিক্ষা করতে চান না। বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে বাকি দিনগুলো আরাম-আয়েশে কাটানোর ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।

আইয়ুব আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাবা-মায়ের ভরণ-পোষণ চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক পরিবারে প্রতিবন্ধীদের প্রতি অন্য সদস্যরা রুষ্ট হয়। আমরা সাধ্যমতো বাবা-মায়ের সব চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করছি।’

নছু মিয়ার স্ত্রী কমলা রানী বলেন, ‘কষ্ট হলেও বেশ সুখেই সংসার জীবন অতিক্রম করছি। ৪০ বছর আগে নছু মিয়ার সঙ্গে সংসার শুরু করি। আমাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। সংসারে অভাব-অনটন থাকলেও ছেলে দেখাশোনা করে। তবে এখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় কখনো কখনো খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে।’

যাদের পরিবারে প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছে, সেসব পরিবারের সদস্যদের প্রতিবন্ধীদের প্রতি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমলা রানী। এতে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হয়, তেমনি প্রতিবন্ধী মানুষজন নিজেকে আর দশজন মানুষের মতো ভাবতে পারেন। সুস্থ্য-স্বাভাবিক মনোবল নিয়ে বেড়ে ওঠেন।

পরিবারের সঙ্গে নছু মিয়া ও রমিজ উদ্দিন

রমিজ উদ্দিন (৫০) বলেন, ‘মাঝেমধ্যে খুব অভাব-অনটন দেখা দিলে এলাকার মানুষজন সাহায্য করেন। আগে এলাকার বাইরে বা রাজধানী ঢাকায় গিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছি। বিশেষ করে রমজান মাস, দুটি ঈদ, ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতাম।’

তার দুই ছেলে। তারা ভ্যানগাড়ি চালান। সামান্য আয় দিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে সংসার চালান। রমিজ জানান, এ বয়সে সন্তানের একার উপার্জনে তার সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষের কাছে হাত পাতেন না। ভিক্ষাবৃত্তি করতে চান না। তবে প্রত্যাশা করেন মানুষের সহায়তা পেলে কষ্টেসৃষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন।

তার স্ত্রী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘বাবা-মা দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছেন। যার সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন, তার সঙ্গেই সংসার করছি। মায়া-মহব্বত, স্নেহ-ভালোবাসা সব অটুট রয়েছে। মানুষ বেঁটে হলেও মায়া-মহব্বত আছে বলেই ৩৫ বছর যাবৎ তার সঙ্গে সংসার করছি। কোনো সময় কোনো বিষয় নিয়ে বাদানুবাদ হয়নি আমাদের।’

নছু মিয়া ও রমিজ উদ্দিনের ছোট ভাই চান মিয়া বলেন, ‘আমাদের সাত ভাই-বোনের মধ্যে দুই ভাই ছাড়া সবাই সুস্থ-স্বাভাবিক। তারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও তাদের ফেলে দেওয়া যাবে না। ভাই-বোনদের মধ্যে সুসম্পর্ক বিদ্যমান। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা এখন মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বড় ভাইয়ের হাঁপানি রয়েছে। সমাজসেবা অফিস থেকে যে টাকা পান, তা দিয়ে ভাইদের চলা খুব কষ্ট হয়।

সিংদিঘী গ্রামের স্থানীয় শিক্ষক সোলায়মান মোহাম্মদ বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তারা দুজন তাদের পরিবারকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সন্তানদের মানুষ করে আসছেন। বেশি পড়াশোনা করাতে পারেননি। তবে মানবিক মানুষ বলতে যা বোঝায় সেভাবে গড়ে তুলছেন। তারা সবাই পরিশ্রম করে। সরকারের কাছ থেকে যে প্রতিবন্ধী ভাতা পান, তা দিয়ে তারা চলতে পারছেন না। তাদের প্রতি বিত্তবানদের সহানুভূতি থাকা উচিত।

মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকন বলেন, ‘যাদের কর্ম নাই, চলাফেরা করতে পারে না, এ রকম হতদরিদ্র মানুষের জন্য সরকার বসে বসে বিক্রি করার জন্য দোকানের অনুদান দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা নছু মিয়া ও রমিজ উদ্দিনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি।’

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ‘রমিজ উদ্দিন ও নছু মিয়াকে আমরা প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় নিয়ে এসেছি। দীর্ঘদিন ধরে ভাতাও পাচ্ছেন তারা। চিকিৎসাসহায়তা হিসেবে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছি। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছি।’

/এনএআর/
সম্পর্কিত
২৭ বছর পর বাড়ি ফিরলেন শাহীদা, পূরণ হয়নি যে আশা
পেনশনের টাকা নিয়ে গেছে একমাত্র ছেলে, বৃদ্ধাশ্রমে চোখের জলে ঈদ কাটলো নিঃস্ব মায়ের
স্বজন ছাড়াই ঈদ কাটবে আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের
সর্বশেষ খবর
বাঘ ছাড়ায় নিজ গ্রামে শেষবার ভোট, আবেগে আচ্ছন্ন বাসিন্দারা!
বাঘ ছাড়ায় নিজ গ্রামে শেষবার ভোট, আবেগে আচ্ছন্ন বাসিন্দারা!
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে যশোর, জনশূন্য রাস্তাঘাট
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা