ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে একটি হত্যা মামলার ঘটনায় নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে আপোষ মীমাংসা করা হয়েছে। সালিশে নিহত শহীদ ফকিরের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং খুন পরবর্তী সহিংসতায় বাড়ি-ঘর ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত আসামিপক্ষের লোকদের ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সোমবার (০২ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে হত্যা মামলার আসামি এবং বাদিপক্ষের লোকেদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়।
স্থানীয় ও সালিশ বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুকুল মিনার সঙ্গে ময়েনদিয়া এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মান্নান মাতুব্বরের পূর্ব শত্রুতা ছিল। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে গত বছরের ২৩ জুলাই সকাল থেকে কাটাখাল এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের ২০ জন আহত হন। ওই সময় উভয় পক্ষের ১৫ থেকে ২০টি বাড়ি-ঘর ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষে আহত শহীদ ফকির (৪৭) ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে ওই দিন সন্ধ্যায় মারা যান। নিহত শহীদ ফকির পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামের রাজ্জাক ফকিরের ছেলে। তিনি কৃষক ছিলেন। নিহত শহীদ ফকির পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ সভাপতি মাসুদ শেখের সমর্থক ছিলেন।
ওই খুনের ঘটনায় ২৯ জনকে আসামি করে ২০২১ সালের ২৬ জুলাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। নিহতের ফুপাতো ভাই আ. মান্নান বাদি হয়ে পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মান্নান মাতুব্বরকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহ সভাপতি মাসুদ শেখ বলেন, সোমবার উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় এ ঘটনায় একটি সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এ ধরনের আপোষ মীমাংসা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদিও আমি সালিশে শেষ পর্যন্ত ছিলাম না। পরে জানতে পেরেছি আসামি পক্ষের লোকেরা নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং ওই সময় বাদি পক্ষের লোকজন কর্তৃক আসামি পক্ষের লোকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করায় ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ টাকা প্রদান করবে বলে সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি মান্নান মাতুব্বর এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, উভয় পক্ষের সন্মতিতে উপজেলা চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেনের মধ্যস্থতায় উপজেলা পরিষদের হলরুমে সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সালিশে নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা এবং ওই সময় বাদি পক্ষের লোকজন কর্তৃক আসামী পক্ষের লোকদের বাড়িঘর ভাংচুর করায় ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ টাকা প্রদান করবে বলে সালিশ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধার্যকৃত টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে লেনদেন করা হবে। এছাড়াও এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে চলমান মামলা-মকর্দমা যার যার খরচে প্রত্যাহার করতে হবে।
মামলার বাদি নিহতের ফুপাতো ভাই আ. মান্নানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেন মুশা মিয়া বলেন, এলাকার শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে উভয় পক্ষের সন্মতিতে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিষে আপোষ মিমাংসা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কোনও ঘটনা ঘটলেই পাশ্ববর্তী উপজেলার লোকজন এসে আমাদের লোকজনের সঙ্গে এক হয়ে দাঙ্গা হাঙ্গামা করে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আপোষ মিমাংসা করা হয়েছে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় এছাড়া কোনও উপায় ছিল না।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, অর্থের বিনিময়ে সালিশ বৈঠক করে হত্যা মামলার মিমাংসার বিষয়টি জানা নেই। মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
