গত কয়েকদিনের তুলনায় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ক্রেতা ও দর্শনার্থী বেড়েছে। তবে বাণিজ্য মেলার ২৭তম এই আসর এখনও পুরোপুরি জমে ওঠেনি। আগামীকাল শুক্রবার (০৬ জানুয়ারি) থেকে বাণিজ্য মেলা জমবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয় বারের মতো মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আসর বসেছে। মেলার পঞ্চম দিন দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও ক্রেতা কম বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (০৫ জানুয়ারি) বিকালে বেশ কয়েকটি স্টলে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। অনেকে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখলেও কেনাকাটা করেছেন হাতেগোনা কয়েকজন।
এদিকে, মেলায় অনেক স্টলের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। ফলে দর্শনার্থীরা মেলায় এসে ঘুরে দেখছেন। আয়োজক ও স্টল মলিকরা বলছেন, শুক্রবার থেকে মেলা জমজমাট হবে।’
মেলায় আসা নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ‘বিকাল থেকে মেলায় লোকসমাগম ছিল। তবে এখনও কিছু স্টলের কাজ সম্পন্ন হয়নি। শীত বেশি পড়ায় লোকজন কম আসছেন। শীত কমলে লোকসমাগম বাড়বে।’
নারায়ণগঞ্জ শহরের আরেক বাসিন্দা শাহ জামাল বলেন, ‘বৃহস্পতিবার অফিসের কাজ শেষ করে মেলায় এসেছি। তবে মেলার সব দোকান এখনও সাজানো হয়নি। অনেক দোকানে মালামাল উঠানো হয়নি। সব দোকানের কাজ সম্পন্ন না হলে মেলা জমবে না। তবে শুক্রবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা যায়।’
মেলায় গোল্ডেন রোজ প্রসাধনী স্টলের বিক্রেতা শিল্পী আক্তার সাথী বলেন, ‘গতকাল বুধবার থেকে মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী বেড়েছে। আজ অন্যান্য দিনের চেয়ে ভিড় ছিল। বেচাকেনা ভালো হয়েছে। আশা করছি, শুক্রবার ক্রেতা ও দর্শনার্থী আরও বাড়বে। মেলা জমজমাট হয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতা বেশি আসবে মাথায় রেখে আমাদের স্টলে স্টাফ বাড়ানো হয়েছে। যদিও আমাদের ধারণা ছিল শীতের মধ্যে লোকসমাগম বেশি হবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে লোকসমাগম বাড়ছে।’
বেচাকেনা কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে ড্রেস লাইন বাংলাদেশ স্টলের বিক্রেতা রুবেল হোসেন বলেন, ‘অনেক ক্রেতা আসছেন। আবার অনেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন কিন্তু কিনছেন না। প্রথম দিকে ক্রেতা কম থাকলেও ধীরে ধীরে বাড়ছে। শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতা ও দর্শনার্থী আরও বাড়বে।’
মেলার অসম্পূর্ণ স্টলগুলো সাজানোর কাজ করছেন কর্মীরা। কেউ কেউ মালামাল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্টলে সাজসজ্জার কাজ করা কাঠমিস্ত্রি আজাদ মিয়া বলেন, ‘গত ২১ দিন ধরে কাজ করছি। কাঠের ফ্রেম তৈরি ও রং করছি। এখন পর্যন্ত ১৬টি দোকানের কাজ করেছি। এখনও কাজের অর্ডার আসছে। কাজ শেষ হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে।’
শুক্রবার ছুটির দিনে ক্রেতা-দর্শনার্থী বাড়বে এবং মেলা জমজমাট হয়ে উঠবে জানিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারের মেলায় গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ লোকসমাগম হবে। প্রায় ৫০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা করছি আমরা।’
অসম্পূর্ণ স্টলগুলোর কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘মেলার সময় ৩০ দিন। এর মধ্যে কেউ যদি দেরিতে স্টলের কাজ সম্পন্ন করেন তাহলে তাদের লোকসান হবে। মেলার হলরুমের প্রায় সব স্টলের কাজ শেষ হয়েছে, যে কয়েকটি বাকি আছে আজ রাতের মধ্যে সম্পন্ন হবে। তবে হলরুমের বাইরে পেছনের অংশের কিছু স্টলের কাজ বাকি আছে। এর মধ্যে কিছু স্টলের বরাদ্দ এখনও হয়নি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যে সব স্টলের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বিদেশি ১০ দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন আয়োজকরা। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড় আছে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।