ছুটির দিনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা জমে উঠেছে। মেলার ষষ্ঠ দিন আজ শুক্রবার দুপুর থেকে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। মেলার স্টলে স্টলে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা বলছেন, বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। মেলার আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রত্যাশার তুলনায় অনেক বেশি লোক সমাগম হয়েছে।
গত ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার পূর্বাচলের ৪ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) দ্বিতীয়বারের মতো মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আসর বসেছে। মেলার শুরু থেকে লোক সমাগম একেবারে ছিল না। তার ওপরে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। তবে পঞ্চম দিন থেকে দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার থেকে বাণিজ্য মেলা জমবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছিলেন ব্যবসায়ী ও আয়োজকরা।
দুপুর থেকে বাণিজ্য মেলা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুপুর থেকে মেলায় দর্শনার্থীদের পদচারণা বাড়তে শুরু করে। বেলা গড়িয়ে বিকাল হতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়। দোকানে বাড়তে শুরু করে বিক্রি। মেলায় নারী ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
সিরামিকসের বিভিন্ন পণ্য নিয়ে স্টল সাজিয়েছেন ক্লে ইমেজ সিরামিকসের মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা রেহানা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আজ বিক্রি বেড়েছে। দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি। আশা করছি দিন দিন বিক্রির পরিমাণ বাড়বে। শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও আমাদের পণ্য যাচ্ছে।’
একই কথা বললেন ড্রেস লাইন বাংলাদেশ স্টলের বিক্রেতা রুবেল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আজ অনেক ক্রেতা আসছেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় বিক্রি বেড়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ রূপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে মেলায় এসেছি। আজ অনেক লোক হয়েছে। মেলা জমে উঠেছে।’
তবে এখনও মেলায় অনেক স্টলের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। আয়োজক ও স্টল মলিকরা বলছেন, গুটি কয়েক স্টলের কাজ বাকি রয়েছে। খুব শিগগিরই কাজ শেষ হবে।
ছুটির দিনে মেলার সার্বিক বিষয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা যেই দর্শনার্থী প্রত্যাশা করেছিলাম সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। আজ প্রায় লক্ষাধিক দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে মেলায়। কয়েকদিনের শৈত্য প্রবাহের কারণে ব্যবসায়ীরা তেমন বিক্রি করতে পারেননি। আশা করছি এখন থেকে ধারাবাহিক লোকজন আসবে।’
শিশু পার্কে বাড়তি ভাড়া রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী রবিবার এই বিষয়ে আমাদের মিটিং রয়েছে। সেদিন এই রাইডের ভাড়া চূরান্ত করা হবে। এর পাশাপাশি খাবারের দামেও কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আশা করছি রবিবারের পর সব মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে দিলে এই সমস্যা আর থাকবে না।’
মেলায় দেশি-বিদেশি ৩৩১ প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে জানিয়ে ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘এর মধ্যে কয়েকটি প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ১০৬টি স্টল বেড়েছে। বিদেশি ১০ দেশের ১৭টি স্টল রয়েছে। এবার বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেলায় খাদ্যপণ্যের মান এবং মূল্যের বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন আয়োজকরা। খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্দিষ্ট থাকবে। মেলায় যাতায়াতে যাতে কোনও ধরনের নিরাপত্তার ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। মেলায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য গতবারের মতো বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এসব বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। মেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
এবার মেলায় প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ছাড় আছে। মেলায় প্রায় এক হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে।