X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

‌ঘরে খাবার নেই, শীতের কারণে কাজও পাচ্ছি না

মইনুল হক মৃধা, রাজবাড়ী
০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৯আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৯

‘গত কয়েকদিন ধরে ঘরে খাবার নেই। পরিবারে সাত সদস্য। খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করে হচ্ছে। এলাকায় কাজ নেই। কাজের সন্ধানে গোয়ালন্দে এসেছি দুই ভাই। কিন্তু তীব্র শীতের কারণে কাজ পাচ্ছি না। এখানে কোনও গৃহস্থ (কৃষিশ্রমিক ক্রেতা) পাচ্ছি না। কাজ পাবো কিনা জানি না। না হয় খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে।’

গোয়ালন্দ রেলস্টেশনে বসে কথাগুলো বলেছেন হোসেন আলী (৪৫)। শ্রম বিক্রি করতে শনিবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুরে ছোট ভাই কোবাদ আলীকে (৪০) নিয়ে কুষ্টিয়ার হারাভাঙা গ্রাম থেকে গোয়ালন্দে এসেছেন হোসেন আলী।

শ্রম বিক্রি করতে তাদের সঙ্গে রেলস্টেশনে বসেছিলেন দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার রহিমাপুর গ্রামের নেকবার শেখ (৪০), গাংনী উপজেলার নাভদিয়া গ্রামের আব্দুল ওহাব (৫৫) ও ঝিনাইদহ জেলার চৌধুরী ঘুঘাট গ্রামের আরিফ হোসেন (৩২)। তারা কেউ তিন দিন আগে, কেউ এক সপ্তাহ আগে, আবার কেউ ১৫ দিন আগে কাজের সন্ধানে গোয়ালন্দে এসেছেন। কেউ কেউ দু’চার দিন বিভিন্ন গৃহস্থের বাড়িতে কৃষিশ্রমিকের কাজ শেষ করে আবার নতুন কাজের সন্ধানে অপেক্ষা করছেন। 

নেকবার শেখ, আব্দুল ওহাব ও আরিফ হোসেন জানান, কাজ পেলে তারা গৃহস্থের বাড়িতে থাকার সুযোগ পান। যখন কাজ থাকে না তখন বিভিন্ন স্কুলের বারান্দায় খোলা স্থানে তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাত কাটাতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। তবে তীব্র শীত তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শীতের কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না, আবার কাজও পান না তারা।’ 

শীতের কারণে কাজ পাচ্ছেন না শ্রমিকরা

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শনিবার রাজবাড়ীতে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। রাতে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে পড়তে থাকে ঘন কুয়াশা। পাশাপাশি হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষজন। 

এদিকে, শীত জেঁকে বসায় বিপাকে পড়েছেন গোয়ালন্দ উপজেলার চরাঞ্চল ও পদ্মা নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী হতদরিদ্র মানুষজন। পদ্মার ভাঙনে নদীগর্ভে বসতভিটা হারানো নদী পাড়ের মানুষজন খড়কুটো দিয়ে কোনও রকমে কুঁড়েঘরে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছেন। বর্তমানে তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন তারা। কাজ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তারাও।

জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি। শীতের কারণে কমেছে যান চলাচল। বাজার ও রাস্তাঘাটে কমেছে মানুষের যাতায়াত। শীতবস্ত্রের অভাবে কাঁপছে নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষজন। শীতের কারণে কাজের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারছেন না অনেকে।

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক মো. আয়ুব শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঘরে খাবার নাই, এজন্য রিকশা নিয়ে বের হইছি। কিন্তু রাস্তায় তো মানুষজন নাই। যাত্রী পামু কই? শীতে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। যাত্রী না পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।’

দৌলতদিয়া পদ্মা পাড়ের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কিয়ামদ্দিন সরদার বলেন, ‘এই টালে (শীত) আমাগো মাতন গরিব মানুষের বাইচ্যা থাহায় কষ্ট হইয়া গেছে। টালের হাথে আবার বাতাস। এই বাতাসের জন্নি ইটু আগুন জ্বালানোর কায়দা নাই। বাতাসে আগুনও জ্বলে না, নিভে যায়।’

পদ্মা পাড়ের ভূমিহীন রোববান বিবি বলেন, ‘নদীভাঙনে ভিটেমাটি বিলীন হওয়ায় অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছি। নদীর পাড়ে খুব বাতাস, শীতও বেশি। এখন পর্যন্ত কেউ কোনও শীতবস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেনি।’

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার হকার মো. কুদ্রত হোসেন বলেন, ‘শীতে রাস্তাঘাটে মানুষজন কম। বেচাকেনা নেই বললেই চলে। গত কয়েকদিন ধরে এ অবস্থা চলছে। আয়-রোজগার কম হওয়ায় খুব কষ্টে দিন পার করছি।’

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশাচালকরা

উপজেলার চার ইউনিয়ন ও এক পৌরসভার অনুকূলে দুই হাজার ৪৫০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে জানিয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু সাইদ মন্ডল বলেন, ‘এগুলো চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। অনেকে শীতবস্ত্র পায়নি। শীতকালীন দুর্যোগ বিবেচনা করে সরকারি কোনও খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এজন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

শীতবস্ত্র বিতরণ ও খাদ্য সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত সরকারি বরাদ্দ থেকে যে কম্বল পাওয়া গেছে, তা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে আরও শীতবস্ত্র বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
বইছে শৈত্যপ্রবাহ, কেমন যাবে পুরো সপ্তাহ?
তিস্তার বাঁধ ভেঙে শীতকালেও বন্যা, পানির নিচে পেঁয়াজ-আলু-ভুট্টা
স্টেপিং-স্টোন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
সর্বশেষ খবর
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
কাভার্ডভ্যান-লরির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই গাড়িতেই আগুন, প্রাণ গেলো একজনের
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়