সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে ২০২১ সালে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়ে সৌদি আরবে পাড়ি জমান মাদারীপুরের জুবায়ের ঢালী। কে জানতো এই যাওয়াই শেষ যাওয়া। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকাল ৪টার দিকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিমি পূর্বে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকায় সোফা কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে তার মৃত্যু হয়েছে। তার সঙ্গে আরও আট বাংলাদেশি মারা গেছেন। জুবায়েরের মৃত্যুতে বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি।
দুই সন্তানের জনক জুবায়েরের বাড়ি কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের সস্তাল গ্রামে। বাবার নাম ইউনুস ঢালী। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুবায়ের সবার বড়। তার এমন মৃত্যু মানতে পারছেন না স্বজনরা।
শিশুসন্তান আবদুল্লাহ (৭) ও মেয়ে আয়েশা (৪) বাবা হারানোর কষ্ট ততটা তেমন অনুভব করতে পারেনি এখনও। তবে স্বামী হারানোর বেদনায় আহাজারি করছেন স্ত্রী শারমিন আক্তার। তার কান্না দেখে ছেলে আবদুল্লাহ বারবার জিজ্ঞেস করছে, ‘মা তুমি কাঁদো কেন? কি হইছে বাবার?’ কিন্তু মায়ের বলার ভাষা নেই। এই অবুঝ শিশু জানে না, তার বাবা কোনোদিন আর ফিরবে না। সেই কথা সন্তানকে কীভাবে বলবেন মা! তার বুকভাঙা আর্তনাদে কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও।
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকালে জুবায়ের ঢালীর বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। তার মৃত্যুতে কাঁদছেন বাবা ও ছোট ভাই। জুবায়েরের ছোট ভাই আকাশ বলেন, ‘বড় ভাই ঋণ নিয়ে বিদেশে যান।। ঋণের কয়েক কিস্তি দিতে পেরেছি। গত দুই বছর করোনার করণে ঠিকমতো কাজ করতে পারেননি ভাই। অনেক কষ্ট করে দিন পার করেছেন। ভাইয়ের এক ছেলে ও এক মেয়ে। তার মৃত্যুতে আমরা একা হয়ে গেলাম।’
বাবা ইউনুস ঢালী বলেন, ‘আমার বাবারে আর দেখতে পারুম না। বাবা আমাগো ভালো রাখতে বিদেশে কত কষ্ট করেছে। শেষ বিদায়ে কত কষ্ট-ই না হয়েছে তার। কী করবো, কীভাবে এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকবো।’
স্বামীর মৃত্যুতে আহাজারি করতে করতে করতে স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, ‘কীভাবে সংসার চলবে? কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবো? দুই সন্তান নিয়ে কীভাবে বেঁচে থাকবো। আমাদের সব শেষ হয়ে গেলো।’
কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা বলেন, ‘লাশ দেশে আনার জন্য যে ধরনের সহযোগিতা লাগবে, উপজেলা প্রশাসন থেকে করা হবে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে যে অনুদান দেওয়া হয়, তা পাওয়ার সহযোগিতা করবো। পাশাপাশি ওই পরিবার উপজেলা প্রশাসনে আর্থিক সহায়তা চাইলে আমরা করবো।’