গাজীপুরের শ্রীপুরের ঐতিহ্যবাহী হাট বরমী। সপ্তাহের বুধবার শীতলক্ষ্যার পাড়ে জমে উঠে সবজির আড়ত। ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত হয় পাইকারি বেচাকেনা। এ বাজারে একদিনে কমপক্ষে ৪২ হাজার কেজি সবজি বেচাকেনা হয়। গাজীপুর ও ময়মনসিংহ থেকে বাজারে সবজি আসে। হাটবার সবজি আমদানি ও বেচাকেনার সঙ্গে প্রায় দুইশ’ শ্রমিক নিয়োজিত থাকেন। চলতি সবজি মৌসুমে বেচাকেনায় বেশ লাভবান চাষিরা।
শীতকালীন সবজি টমেটো, আলু, বাঁধাকপি, শিম, কাঁচা কলা প্রভৃতি বেচাকেনা হয় বরমী বাজারে। ইদানীং বরমী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় স্ট্রবেরি ও ব্রোকলি চাষ হচ্ছে। বিদেশি এসব ফল-ফসলের আমদানিও হয় বরমী হাটে। গত কয়েকটি হাটে টমেটো ও আলু বেচাকেনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাজারের সব সবজি বিষমুক্ত বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও, পাগলা, টাঙ্গাবোসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা এবং গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে এসব সবজি আসে। হাটবার ভোর ৫টা থেকেই সবজি আসতে থাকে। প্রতি হাটে ছয় ট্রলার পণ্য আসে। প্রতি ট্রলারে কমপক্ষে একশ’ খাঁচা সবজি থাকে। প্রতি খাঁচার গড় ওজন হয় ৭০ কেজি। সব মিলিয়ে একদিনে ৪২ হাজার কেজি কাঁচা সবজির সমারোহ ঘটে বরমী বাজারে। আশপাশের হাটগুলোর খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি মূল্যে এসব পণ্য কেনেন।
গফরগাঁওয়ের কৃষক আব্দুস ছাত্তার বলেন, ‘২০ বছর ধরে কৃষি কাজ করছি। ১৫ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহে কাঁচা সবজি নিয়ে আসছি বরমী বাজারে। আমরা আড়তে সবজি বিক্রি করি। অন্য বছরের চেয়ে এবার বিক্রি ভালো। আমরাও লাভবান।’
বরমী বাজারের শ্রমিক শামসুদ্দীন বলেন, ‘আলু, টমেটো ট্রলার থেকে ডাঙায় তুলি। শীতকালে বেশি কাজ করতে হয়। অন্যান্য সময় বাজারের ভেতর কাজ করি। আমার মতো দেড়শ’ শ্রমিক এখানে কাজ করে।’
`গফরগাঁয়ের টাঙ্গাবো এলাকার কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা কৃষি কাজ করি ২০ বছর ধরে। এবার উৎপাদন কম কিন্তু দাম ভালো। টমেটো বিক্রি করি তিন মাস। অন্যান্য সময় ঝিঙা, করলা, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজি বিক্রি করি। আট জন কৃষক একটি ট্রলার ভাড়া করি। প্রতি কেজিতে এক টাকা করে পরিবহন ভাড়া এবং শতকরা ছয় টাকা আড়ত খরচ। প্রতি হাটে চার-পাঁচটি ট্রলার আসে বরমী বাজারে।’
খুচরা বিক্রেতা মামুন সরকার বলেন, ‘দেড়শ’ শ্রমিক বাজারে মালামাল উঠানোর কাজ করেন। দেড় মাস আগে ২০ টাকা কেজি দরে টমেটো কিনতে হতো। এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় কিনতে হয়।’
বাজারের আড়তদার জালাল উদ্দিন বলেন, ‘সপ্তাহে একদিন মালামাল বিক্রি করি। প্রতি বুধবার সব মিলিয়ে লাখ টাকার মাল বিক্রি হয়। এখানে আসা সবজিগুলো বিষমুক্ত।’
সবজি শ্রমিক আল-আমিন বলেন, ‘কাজ করে প্রতি দিন এক থেকে দেড় হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ হাটে শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাই।’
হুমায়ুন কবীর নামে একজন বলেন, ‘বরমী বাজারের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। এটি জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী বাজার। মোঘল আমল থেকে এ বাজারের প্রসার ঘটে। প্রতি হাটবারে শীতলক্ষ্যার পাড়ে জমে ওঠে সবজির আড়ত। ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত পাইকারি বেচাকেনা হয়। বাজারের দৃশ্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন।’
রাসেল এন্টারপ্রাইজের মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গফরগাঁও, পাগলা, টাঙ্গাবো এলাকা থেকে সবজি বেশি আসে। প্রতি বুধবার পণ্য আসে কমপক্ষে ছয়টি ট্রলারে। প্রতি ট্রলারে একশ’ খাঁচা আসে। প্রতি খাঁচায় পণ্য থাকে গড়ে ৭০ কেজি। বাজারে বেশিরভাগ সময় ময়লা-আবর্জনা থাকে। প্রশাসন পরিচ্ছন্নতার ও যানজটের বিষয়ে নজরদারি করলে বাইরে থেকে পাইকাররা আসতো। এতে বেচাকেনা ও দাম বেশি পাওয়া যেতো।’