নরসিংদীর রায়পুরায় ডাক্তারের বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বা নারী সাবিকুন্নাহারের সন্তান প্রসবের সময় ভুল চিকিৎসায় তার নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোগীর পেটে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে শিশুটি মারা যাওয়ার অভিযোগ করা হয়। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। সাবিকুন্নাহারের ভাই মিজান মিয়া এ অভিযোগ করেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা সাকিুন্নাহারকে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর চিকিৎসক ও নার্স সাবিকুন্নাহার ও তার গর্ভের বাচ্চা সুস্থ আছে বলেও জানায়। এ সময় স্বজনেরা রোগীকে সিজার করানোর কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা প্রসব হবে বলে জানায়। সকাল হলে ব্যথা তীব্র হওয়ায় তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর চিকিৎসক ও নার্স মৃত বাচ্চা তাদের হাতে দিয়ে বলে সাবিকুন্নাহারের মৃত বাচ্চা হয়েছে। এ সময় ডেলিভারি রোগীকে তারা ট্রলিতে না নিয়ে হাঁটিয়ে বেডে নেয়। তখন প্রসূতির অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
প্রসূতির ভাই মিজান মিয়া বলেন, ‘আমরা ট্রলির কথা বললে নার্সরা জানান নরমাল ডেলিভারিতে ট্রলি ব্যবহার করা হয় না। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তারা আমাদের একজনকে তালাবদ্ধ করে রাখে। পরে তাদের কাছে অনুরোধ করে আটককে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। ওটিতে থাকা অবস্থায় আমার বোনকে (সাবিকুন্নাহার) এক নার্স থাপ্পড়ও মারে। আমরা বিষয়টা জানতে পেরে জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে।’
ওই প্রসূতি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘রাতে ভর্তি করানোর পর আমাকে একটা ইনজেকশন পুশ করা হয়। বলা হয়, ভোরে তারা আমাকে স্যালাইন দেবে। ভোরে স্যালাইন দেওয়ার জন্য ডাকলে তারা আমার মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। সকালে ব্যথা শুরু হলে তারা আমাকে ওটিতে নেয়। তখন তাদের একজন আমার পেটের দিকে জোরে জোরে চাপ দিতে থাকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসার মতো অবস্থা হয়। একপর্যায়ে আমি তার হাতটা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে থাকা একজন আমাকে থাপ্পড় মারে। পরে আরেকজন বারবারই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, বাচ্চা নড়াচড়া করছে কিনা। তখন আমি তাদের বাচ্চা নড়াচড়া করে বলে জানাই। এ সময় থাপ্পড় দেওয়া মহিলা আমার পেটে জোরে চাপ প্রয়োগ করে। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, এখন বাচ্চা নড়ে কিনা। তখন আমি বলি, এখন তো তেমন কিছু বুঝতেছি না। তবে একটু আগেও নড়ছিল। তখন ওটিতে থাকা আরেকজন তাকে চাপ দিতে মানা করে। তারপরও তিনি পেটে চাপ প্রয়োগ করেন এবং অকথ্য ভাষায় কথা বলতে থাকেন। পেটে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগের কারণে আমার বাচ্চা মারা গেছে।’
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক জেসমিন বলেন, ‘নরমাল ডেলিভারিতে সমস্যা ছিল না। স্বাভাবিক নিয়মেই বাচ্চা হয়েছে। বাচ্চা হওয়ার পর কাঁদে নাই এবং কোনো শ্বাস-প্রশ্বাসও নেয়নি। তাই বাচ্চাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।’ ওটিতে রোগীকে থাপ্পড় মারার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন তাদের বাচ্চা মারা গেছে। তারা কত কথাই বলবে। তবে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে থাপ্পড় মারা বা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।’
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় এ বিষয়ে ওনার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।