X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
মুন্সীগঞ্জে ঈদবাজার

কেনাকাটার ধুম, চাহিদার শীর্ষে আলিয়াকাট সারারা, গারারা ও আনারকলি

সুমিত সরকার সুমন, মুন্সীগঞ্জ 
০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০১আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০১

ঈদের বাকি হাতেগোনা আর মাত্র কয়েকদিন। শেষ মুহূর্তে মুন্সীগঞ্জে শহরে জমে উঠেছে কেনাকাটা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। ব্যস্ত রয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। বিপণিবিতানগুলোতে নেমেছে ঢল। নিজের ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য কিনছেন পছন্দের পোশাক। সবমিলিয়ে জেলার ঈবাজার এখন বেশ সরগরম। এবার চাহিদার শীর্ষে আছে আলিয়াকাট সারারা, গারারা ও আনারকলিসহ নানা বিদেশি পোশাক।

বিক্রেতারা বলেছেন, শেষ সময়ে এসে রমজানে রাতের বেলায় ঈদবাজার বেশি জমজমাট থাকছে। রাত যত বাড়ে, ঈদের কেনাকাটাও তত বাড়ে। রমজানের প্রথম চার সপ্তাহে বেশি ক্রেতা ছিল না। এখন ক্রেতা বাড়ায় বিক্রি বেড়েছে। তবে ক্রেতারা বলেছেন, গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি।

রবিবার (০৭ এপ্রিল) রাতে শহরের বিপণিবিতান ও দোকানপাট ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই জমজমাট ঈদের বাজার। ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে বিপণিবিতানের সামনে নানা রঙের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই। নারীরা কিনছেন শাড়ি, থ্রি-পিস আর পুরুষের পছন্দ পাঞ্জাবি। শিশুদের পছন্দ নানা রঙের পোশাক। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন বেশিরভাগ মানুষ।

শহরের আফতাব শপিং কমপ্লেক্স, জিএসি সিটি গার্ডেন, মসজিদ মার্কেট, মোল্লা প্লাজা, ডাকবাংলো সেন্টার, জেলা পরিষদ মার্কেট, হাজী সুপার মার্কেট, নিশাত স্টোর, পাল স্টোরসহ বড় বড় বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। একই চিত্র দেখা গেছে জুতাসহ বিভিন্ন প্রসাধনীর দোকানে।

সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা

সদর উপজেলার চরকেওয়ার ইউনিয়নের টরকী গ্রাম থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা বৃষ্টি আক্তার বলেন, ‘এবারের ঈদে পাকিস্তানি ও ভারতীয় থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি। এজন্য দামও বেশি। বিশেষ করে ভারতীয় নায়রা, গারারা, সারারা, কাতান ও লেহেঙ্গা বেশি কিনছেন ক্রেতারা। আলিয়াকাট সারারা, গারারা, আনারকলির কথা শুনছি সবার মুখে। আমিও আলিয়াকাট সারারা, গারারা দেখছি নিজের জন্য। তবে এখন পর্যন্ত কিনতে পারিনি। কারণ দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনতে হবে। কারণ ঈদ বছরে একবারই আসে।’

মানিকপুর থেকে কেনাকাটা করতে আসা দীনা ইসলামের সঙ্গে মসজিদ মার্কেটে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদের জামাকাপড়ের সঙ্গে জুতা ও কসমেটিকের দামও বেড়েছে। তারপরও প্রাইজটাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, পছন্দটাই মূল। শহরের মার্কেটগুলো ঘুরে পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছি।’

মোল্লাকান্দি থেকে মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে আসা মাহিমা আক্তার শহরের আফতাব শপিং কমপ্লেক্সে নিজের পছন্দের জামা খুঁজছেন। তিনি বলেন, ‘কয়েকটি মার্কেট ঘুরেছি। পরিবারের অন্যদের জন্য কেনাকাটা হয়ে গেছে। তবে এখনও নিজের জন্য কেনা বাকি। আমার পছন্দ পাকিস্তানি ড্রেস। সেটির চাহিদা এবার বেশি, তাই গতবারের তুলনায় দামও বেশি। আরও কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখে তারপর নিজের জন্য কিনবো।’

বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার মো. সালাম বলেন, ‘কয়েকটি মার্কেট ঘুরেছি। পরিবেশ অনেক ভালো। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি। স্ত্রীর জন্য পাকিস্তানি ড্রেস কিনেছি, সেটির দাম প্রথমে দোকানি চেয়েছেন ১৫ হাজার টাকা। পরে দামাদামি করে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকায় কিনেছি। নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি কিনেছি। আপাতত আর কিছু কিনবো না।’

বিপণিবিতানগুলোতে নেমেছে ঢল, নিজের ও আত্মীয়-স্বজনদের জন্য কিনছেন পছন্দের পোশাক

শহরের দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা জাকারিয়া হাবিব বলেন, ‘ছেলের জন্য শার্ট-প্যান্ট কিনেছি। এখনও মেয়ের ড্রেস পছন্দ হয়নি। পছন্দ হলেও দামে মিলছে না। এ বছর সব পোশাকের দাম প্রায় দ্বিগুণ।’

শহরের বাসিন্দা সুমাইয়া মিশু বলেন, ‘ছেলেমেয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ি এবং আমারসহ পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এখন ড্রেসের সঙ্গে মিল করে জুতা আর কানের দুলসহ কিছু কসমেটিকস কিনবো।’

দোকানিরা জানিয়েছেন, এবার নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আলিয়াকাট সারারা, গারারা, আনারকলি, আঙ্গারাখা, আফগান, গুজরাটি বুটিক ও দিল্লি বুটিকসহ বেশ কয়েকটি ড্রেস। তরুণরা বেশি কিনছেন সিকুয়েন্স আর রেমি কটন পাঞ্জাবি। বেশি দামে কেনা পড়ায় তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

আফতাব শপিং কমপ্লেক্সের সাদিয়া বস্ত্রালয়ের স্বত্বাধিকারী আবু সিয়াম বলেন, ‘এবার ঈদে আলিয়াকাট সারারা, গারারা, আনারকলি, আঙ্গারাখা, আফগান, গুজরাটি বুটিক ও দিল্লি বুটিকসহ বেশ কয়েকটি ড্রেস বেশি বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দামও কিছুটা বেশি। কারণ সবকিছুর দাম বেশি। বেশি দামে মোকাম থেকে কিনতে হয়েছে আমাদের। তবে ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে থেকে দামাদামি করতে কিনতে পারছেন।’

একই শপিং কমপ্লেক্সের রাজন স্টোরের স্বত্বাধিকারী নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের দোকানে করাচি, ভারতীয় থ্রি-পিস, সারারা, গারারা, আনারকলি, আঙ্গারাখা, আফগানি নানা পোশাক রয়েছে। এর মধ্যে করাচি পোশাকের চাহিদা বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম কিছুটা বেশি। তবু বিক্রি ভালো হচ্ছে।’

সবমিলিয়ে জেলার ঈবাজার এখন বেশ সরগরম

দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মসজিদ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তার প্রভাব পোশাকের ওপরেও পড়েছে। পাইকারিতে বেশি দামে কেনা পড়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন নয় যে কম দামে কিনে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছি আমরা।’

এদিকে, ঈদের কেনাকাটা নির্বিঘ্ন করতে জেলার বিভিন্ন পয়েন্ট ও মার্কেটের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, ‘শহরের বিপণিবিতানগুলোর সামনে এবং হাটবাজারসহ যেখানে লোকসমাগম বেশি সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্রেতারা কোনও ধরনের হয়রানির শিকার হলে পুলিশ সহায়তা করবে। পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ফিতরা-জাকাতের নামেও প্রতারণা
ঈদের ছুটি শেষে ভারত থেকে ফিরছেন যাত্রীরা, ইমিগ্রেশনে ভোগান্তি
ফিরতি ঈদযাত্রা: আগের দামে টিকিট নেই, দ্বিগুণ দিলে আছে
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা