ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। ত্রাণ সহায়তায় সারা দেশের মানুষ এগিয়ে এসেছেন। এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার টাকা বন্যার্তদের দেওয়া হবে বলে ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু মসজিদ কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বিষয়টি সঠিক নয়। আসলে এটি গুজব। মসজিদ পরিচালনা কমিটি এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৭ আগস্ট কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের সব কটি দানবাক্সের টাকা গণনা শেষে পাওয়া গেছে সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা। এ ছাড়া পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও বৈদেশিক মুদ্রা। এরই মধ্যে গত দুদিন ধরে সর্বশেষ দানবাক্সে পাওয়া সাত কোটি ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬ টাকা বন্যার্তদের জন্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে ফেসবুকে কয়েকটি পোস্ট ভাইরাল হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মসজিদের ফান্ড থেকে বন্যাকবলিতদের মাঝে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। সভাও হয়নি। ফেসবুকে যেসব পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো গুজব।’
একই কথা বলেছেন পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘মসজিদের দানবাক্সের সাত কোটি টাকা বন্যার্তদের জন্য দেওয়ার যে তথ্য ফেসবুকে প্রচারিত হচ্ছে, তা গুজব। পাগলা মসজিদ পরিচালনার জন্য ৩০ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। সর্বশেষ দানবাক্স থেকে টাকা পাওয়ার পর কমিটির কোনও মিটিং হয়নি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মিটিং করার কোনও সুযোগ নেই। কাজেই কমিটির সভায় দানবাক্সের সাত কোটি টাকা বন্যার্তদের জন্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত, বলে যা প্রচার হচ্ছে তা মিথ্যা। ওয়াকফ এস্টেটের অধীনে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে। তাই ইচ্ছে করলেই মসজিদের টাকা কোথাও অনুদান দিতে পারবে না কমিটি।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর তীরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সগুলো তিন থেকে চার মাস পর খোলা হয়। এর আগে ২০ এপ্রিল খোলা হয়েছিল। তখন ২৭টি বস্তার মধ্যে সাত কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা, সোনার গয়না ও হীরা পাওয়া যায়; যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল। দানবাক্সে পাওয়া টাকাগুলো শহরের একটি ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা রাখা হয়। ওই টাকা দিয়ে শত কোটি টাকা ব্যয়ে পাগলা মসজিদ বহুতল ভবন ও কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তবে মসজিদের হিসাবে এ পর্যন্ত কত টাকা জমা আছে, সেটি প্রকাশ করেনি মসজিদ কমিটি।