‘আন্দোলন থেকে না ফেরা মেয়েটা আমার ইন্টার পাস করছে। কিন্তু আফসোস, স্বাধীন দেশে নিজের রেজাল্টটা আর দেখতে পারলো না আমার মা।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত নাফিসা হোসেন মারওয়ার বাবা আবুল হোসেন এভাবেই কান্নাভেজা চোখে মেয়ের এইচএসসির ফলাফলের কথা জানাচ্ছিলেন।
১৭ বছর বয়সী নাফিসা চলতি বছর গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার শাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। আজ ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় নাফিসা জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় একজন চা-দোকানি। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে আবুল হোসেন থাকতেন টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি এলাকার ৮ নম্বর ব্লকে একটি ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নাফিসার মা কুলসুম বিদেশে পাড়ি জমান কয়েক বছর আগে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবুল হোসেন বলেন, ‘মেয়ের লেখাপড়ায় যাতে বেঘাত না ঘটে, সে জন্য তাকে কখনও রান্না করতে দিতাম না। ছোট চায়ের দোকানে যা আয় হতো পুরোটাই মেয়েদের পড়াশোনা আর দেখভালে খরচ করেছি। ১৮ জুলাই আমাকে না বলেই নাফিসা উত্তরায় ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। পরে প্রতিবেশীদের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাধা দিই। কিন্তু মেয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে ৩ আগস্ট সাভারে তার মামার বাসায় বেড়াতে যায়। নাফিসার স্কুল সাভারে হওয়ায় সেখান তার অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিল, তাদের সঙ্গেই সে সাভারে আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলি খেয়ে শহীদ হয়েছে। কিন্তু একটাই কষ্ট, যে স্বাধীনতার জন্য আমার মেয়েটা প্রাণ দিল, সেই স্বাধীন দেশে সে তার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে যেতে পারেনি।’
গত ৫ আগস্ট বেলা ২টার দিকে আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন নাফিসা। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই বীরকন্যা।
পরে খবর পেয়ে নাফিসার বাবা হাসপাতালে যান। সেখান থেকে মেয়ের মরদেহ নিয়ে এসে টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার কবরস্থানে দাফন করেন।