টাঙ্গাইলের সখীপুরে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠায় অপমান সইতে না পেরে ফাঁসিতে ঝুলে নুরুল ইসলাম (৫৫) নামের এক স্কুলশিক্ষকের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার কৈয়াদী গ্রামের নিজ বাড়ির রান্নাঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত নুরুল ইসলাম উপজেলার দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ওই গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৭ আগস্ট দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী দাড়িপাকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপিও দেয়। এরপর থেকেই ওই শিক্ষক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। জেলা শিক্ষা কার্যালয় ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের একটি তদন্ত শেষ করেছে। ওই তদন্তের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলাম আপিল করলে বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয়বার তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় তদন্তের প্রথম দিন। এ কারণে নুরুল ইসলামকে বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল।
এদিকে, নিজের বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানির অভিযোগ সইতে না পেরে নুরুল ইসলাম ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই যৌন হয়রানির বিষয়টি মিথ্যা ও একটি মহল পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর পাঁয়তারা করেছিল বলে দাবি করেন।
নুরুল ইসলামের মেয়ে নিপা (২৫) সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেন, ‘স্থানীয় মোস্তফা কামাল ও ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। তারা আমার বাবার কাছে টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করতে না চাওয়ায় তারা হাইস্কুলের শিক্ষার্থী এনে পরিকল্পিতভাবে আমার বাবার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করিয়েছে। এসব মিথ্যা অপবাদ ও হুমকি-ধমকির কারণেই বাবা আত্মহত্যা করেছেন। আমি ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার দাবি করছি। মূলত তাদের কারণেই আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে মোস্তফা কামাল বলেন, ‘নুরুল ইসলামের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি এসব কেন করাতে যাবো? কেউ যদি আমার নাম উল্লেখ করে থাকে, তবে তা হবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন খান বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কোনও নির্দিষ্ট ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনা হয়নি। প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী দাড়িপাকা উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলা হয়েছে এলাকাবাসীর আবেদনপত্রে। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) দ্বিতীয়বার তদন্তের জন্য তার বিদ্যালয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সকালেই খবর পেলাম তিনি মারা গেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’